পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার যা অনেক বেশি কার্যকরী

আপনি যদি পেঁপে গাছের রোগের সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার আর্টিকেলটি পড়ুন। পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে পেঁপে গাছে ফুল আসলে করণীয় ও পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার
আশা করছি আপনারা পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার আর্টিকেলটি পড়ে পেঁপে গাছের সকল ধরনের সমস্যার সমাধান পাবেন।

পেঁপে গাছ লাগানোর নিয়ম

পেঁপে গাছের ফলন বৃদ্ধির জন্য এবং ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পেঁপে গাছ গাছ লাগানোর সময় থেকেই বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কারণ কথায় আছে কোন বিল্ডিং এর মূল ভিত যদি শক্ত না হয় তাহলে বিল্ডিং ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গাছের ফলন ভালো পাওয়ার জন্য গাছ লাগানো থেকেই বিশেষ নজর রাখতে হবে। 

আপনি যদি অবহেলার মাধ্যমে গাছ লাগান তাহলে সেই গাছ ভবিষ্যতে মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা ভালো ফলন না হওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে। তাই যদি চান গাছে ফলন ভালো হোক তাহলে অবশ্যই পেঁপে গাছ লাগানোর সময় থেকেই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। ভালোভাবে ও সঠিক নিয়ম গাছ লাগালেই পেঁপে গাছ থেকে পাবেন ভালো ফলন। 

এখন জেনে নিন পেঁপে গাছ লাগানোর নিয়মঃ

পেঁপে গাছ লাগানোর পূর্ব প্রস্তুতি প্রথমে গ্রহণ করতে হবে। পূর্ব প্রস্তুতি বলতে যেই জমিতে পেঁপে গাছ লাগাবেন সেই জমি ভালোভাবে চাষ করতে হবে এবং মই দিতে হবে। পেঁপে গাছ যেই জমিতে লাগাবেন সেই জমি দোআঁশ কিংবা বেলে দোআঁশ মাটি হলে বেশি ভালো হয়। 

পেঁপে চাষের জন্য নির্বাচিত জমির উঁচু স্থানে হতে হবে। কারণ যদি জমিতে পানি জমে থাকে তাহলে তা পেঁপে চাষের জন্য ক্ষতিকর। পেঁপে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করার পর দুটি বেডের মাঝে ৩০ সে.মি. চওড়া করে এবং ২০ সে.মি. গভীর নালা তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখবেন যে যেই বেড তৈরি করবেন নালাসহ প্রতিটি বেড ২ মিটার চওড়া হবে।

পেঁপে গাছের চারা রোপনের পূর্বে ২ মিটার দূরত্ব করে গর্ত তৈরি করতে হবে খেয়াল রাখবেন গর্তের পরিমাণ যেন চারিদিকে দুই ফুট হয়। যখন গর্ত করবেন তখন গর্তের মাটির সাথে ইউরিয়া এবং এমওপি সার ব্যতীত কোন সকল সার ব্যবহার করবেন। 

মাটিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে রস না থাকে তাহলে সার দেওয়ার পর সেচ দিতে হবে। গাছ লাগানো পর যখন গাছে নতুন কথা আসবে তখন ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন একটি গর্তে ২ থেকে ৩ টি চারা গাছ লাগাতে হবে। ২ থেকে ৩টি গাছের ভেতর যেই গাছে ফুল আসবে সেই গাছ দেখে অন্যান্য গাছগুলো তুলে ফেলে যেতে হবে। 

কিন্তু খেয়াল রাখবেন পরাজয়ের জন্য স্ত্রী গাছের পাশাপাশি বাগানে পুরুষ গাছ রাখাও জরুরী। আপনি যদি পেঁপে চাষ করে ভালো ফলন পেতে চান তাহলে পেঁপের চারা গাছ আশ্বিন ও পৌষ মাসের দিকে লাগানোর চেষ্টা করুন। পেঁপে গাছের চারা লাগানো সঠিক সময় হচ্ছে পড়ন্ত বিকেল বেলা।

পেঁপে গাছ কত দিন বাঁচে

পেঁপে গাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পেঁপে গাছের জীবন চক্র ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে পেঁপে গাছ কত দিন বাঁচে তাহলে পেঁপে গাছের জীবন চক্র সম্পর্কে জেনে নিন।

রেড লেডি হাইব্রিড প্রজাতির পেঁপে গাছের জীবন চক্রঃ এটি একটি উচ্চ ফলনশীল প্রজাতির পেঁপে গাছ। এই গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১০ ফিট। একটি গাছে ৫০ থেকে ১২০ টি ফল ধরে থাকে। এ জাতের পেঁপে গাছ দুই বছরের ও বেশি সময় বেঁচে থাকে।

টপ লেডি হাইব্রিড প্রজাতির পেঁপে গাছের জীবন চক্রঃ এটি উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপে গাছ। এই গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১০। এই প্রজাতির পেঁপের গাছে পেঁপে ৫০ থেকে ১০০ টি ফল ধরে থাকে। এই জাতের পেঁপে গাছ ও দুই বছরের বেশি বেঁচে থাকে।

পুসা বামন প্রজাতির পেঁপে গাছের জীবন চক্রঃ এটি একটি বামন প্রকৃতির গাছ। এই গাছ উচ্চতায় ছোট হয়ে থাকে। এই গাছে ছোট অবস্থায় ফল ধরা শুরু করে। একটি গাছে ৪০ থেকে ৫০ টি ফল ধরে থাকে। এই গাছের মেয়াদকাল দুই বছর ও তার বেশি।

আরো কিছু পেঁপে গাছের প্রজাতি রয়েছে তার নাম হচ্ছে কুর্গ মধু শিশির, সূর্যোদয় একক ইত্যাদি। পরিপূর্ণ যত্ন নিলে একটি পেঁপে গাছ সর্বোচ্চ দুই বছর ও তার বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় যত্নের অভাবে সময়ের আগেই অনেক পেঁপে গাছ মারা যায়।

পেঁপে গাছে ফুল আসলে করণীয়

পেঁপে গাছে ফুল আসলেই যে সেই ফুল থেকে ফল ধরবে তা কিন্তু নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় পেঁপে গেছে ফুল আসার পরে সে সকল ফুল ঝরে পড়ে যাই। আর সেই কারণে গাছের ফলন অনেক কম হয়। 

গাছে ফুল আসলে কিছু কিছু করণীয় আছে যেগুলো করা উচিত। পেঁপে গাছে ফুল আসার পর আপনি যদি কিছু নিয়ম মানতে পারেন তাহলে সেই সকল ফুল ফলে পরিণত হবে এবং আপনি লাভবান হবেন। এখন জেনে নিন পেঁপে গাছে ফুল আসলে করণীয় গুলো কি কিঃ
  • পেঁপে গাছে প্রতিমাসে সার প্রয়োগ করতে হয়। তাই আপনাকে প্রতিমাসে ইউরিয়া এবং এম ও পি সার নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রতিমাসে একবার প্রয়োগ করতে হবে।
  • যখন পেঁপে গাছে ফুল আসবে তখন আপনাকে বোরণ সার প্রয়োগ করতে হবে। এই সার নিয়মিত রাসায়নিক সারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এই সারের মাত্রা হবে ৫ থেকে ১০ গ্রাম প্রতিহারে।
  • পেঁপে গাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে।
  • অনুখাদ্য প্রতি লিটারে ২ মিলি এবং তার সাথে প্রতি লিটারে দেড় গ্রাম বোরণ মিশিয়ে পেঁপে গাছের ফুলে স্প্রে করতে হবে।
  • পেঁপে গাছের গোড়া সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
  • পেঁপে গাছের গোড়ায় যেন পানির অভাব না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পেঁপের কান্ড পচা রোগ

পেঁপের কাণ্ড পচা রোগ এটি পেঁপে গাছের একটি প্রধান সমস্যা গুলোর মধ্যে একটি। এটি পেঁপে গাছের একটি ছত্রাক জনিত রোগের মধ্যে একটি। এই রোগের আক্রমণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে দেখা যায়। বীজে চারা গজানোর আগেই বীজ পচে যাওয়া এ রোগের একটি লক্ষণ। আক্রান্ত অংশ পচে যায় এবং হালকা বাতাস হওয়ার কারণে গাছ ভেঙে পড়ে যাই।

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ এই রোগ যেই গাছে দেখা দিবে সেই গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে। পেঁপে গাছের গোড়াই পানি জমে থাকলে এই রোগে আক্রান্ত বেশি হয় তাই জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পেঁপে গাছের গোড়ার মাটি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য ৫% ফরমালিন ব্যবহার করতে পারেন। এ রোগ দেখা দিলে পেঁপে গাছের গোড়ার চারপাশে ১% বর্দোমিকচার অথবা redol gold ২% স্প্রে করতে হবে।

পেঁপে গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ

পেঁপে গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ পেঁপে গাছের ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে একটি। পেঁপে গাছ এই রোগে আক্রান্ত হলে পেঁপে গাছের পাতা কুচকানো অথবা কোঁকড়ানো দেখা যায়। এই রোগে পেঁপে গাছ আক্রান্ত হলে পেঁপে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। পেঁপে গাছের নতুন পাতা গজালেও সেই পাতাগুলো কোকড়ানো ধরনের হয়ে যাই।

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ যদি কোন গাছ এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সেই গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে। যে সকল চারা গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি সেই সকল চারাগাছ ব্যবহার করতে হবে। এই রোগের প্রধান বাহক হচ্ছে জাপ পোকা এবং সাদামাছি। এই দুই ধরনের বাহক দমন করার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বাহকদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মিলি এক লিটার পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার

পেঁপে গাছের মোজাইক রোগ পেঁপে গাছের ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে একটি। এই রোগে পেঁপে গাছ যে কোন সময় হয়ে থাকে। কিন্তু চারা গাছ থাকাকালীন এ রোগে পেঁপে গাছ আক্রান্ত হলে পেঁপে গাছের অধিক ক্ষতি হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পেঁপে গাছের পাতায় হলুদ ও গারো সবুজ বর্ণের দাগ দেখা দেয়। এই রোগে পেঁপে গাছ আক্রান্ত হলে পেঁপে গাছের ফল ছোট ছোট এবং আকারে বিকৃতি হয়ে যায়।

পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকারঃ এ রোগে আক্রান্ত হলেন গাছ তুলে ফেলে হয় মাটিতে পুঁতে দিতে হবে না হয় পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ তাই গাছ লাগানোর পূর্বে রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন চারা গাছ ব্যবহার করতে হবে। 

এই রোগের বাহক হচ্ছে জাপ পোকা। তাই এই রোগের হাত থেকে পেঁপে গাছকে রক্ষা করতে হলে এই পোকা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই পোকা দমন করতে ইমিডাক্লোরোপ্রিড ০.২% কিংবা এডমায়ার ০.৫% গ্রাম প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে।

পেঁপের চারা ধ্বসা রোগ

পেঁপের চারা ধ্বসা রোগ রোগের কারণে পেঁপে গাছের গোড়ার চারিদিক দাগ হয়ে পচে যাই। পেঁপে গাছের গোড়ায় স্যাঁতসাঁতে ভাব থাকলে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই রোগ মাটি এবং পানির মাধ্যমে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ পেঁপের চারা ধ্বসা রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে পেঁপে গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকা অথবা পেঁপে গাছের গোড়ার মাটি স্যাতসেতে হয়ে থাকা। তাই পেঁপে গাছ চাষ করেছেন সেই জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যেই গাছ এ রোগে আক্রান্ত হবে সেই গাছ মাটির তল থেকে তুলে ফেলে দিতে হবে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন চারা গাছ ব্যবহার করতে হবে। এই রোগ পেঁপে গাছের চারা অবস্থায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই চারা তৈরি করার সময় রৌদ্র যুক্ত উঁচু স্থানে চারা তৈরি করতে হবে। চারাগাছ লাগানোর পূর্বে ব্যাভিস্টিন অথবা নোইন কিংবা ট্রাইকোডারমা ভিরিড মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।

পেঁপের ঢলেপড়া রোগ

পেঁপের ঢলে পড়া রোগ পেঁপে গাছে যেকোনো বয়সেই দেখা দিয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে গাছের পাতা হলদে হয় তারপর বাদামি রঙের হয়ে ঝরে পড়ে। আস্তে আস্তে গাছের শাখা প্রশাখা সব শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যাই।

প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ এ রোগে গাছ আক্রান্ত হলে গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় জিপসাম এবং চুন প্রয়োগ করতে হবে। পেঁপে গাছ আক্রান্ত হলে প্রাথমিক অবস্থাতেই বর্দোমিকচার ১% ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আপনারা পেঁপে গাছের মোজাইক রোগের প্রতিকার আর্টিকেলটি পড়ে পেঁপে গাছের সকল ধরনের রোগ এবং সেই সকল রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পেঁপে চাষ করে লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই পেঁপে গাছের প্রতি অতিরিক্ত যত্নশীল হতে হবে। 

পেঁপে গাছের যত্ন যত বেশি নেবেন পেঁপে গাছের ফলন তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ভালো ফলন পেতে নিয়মিত পেঁপে গাছের পরিচর্যা করুন। আশা করছি সঠিক নিয়মে পরিচর্যা করলে আপনিও পেঁপে চাষ করে লাভবান হতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url