হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হায়েজ অবস্থায় আমল

আপনি কি হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হায়েজ অবস্থায় আমল সম্পর্কে অবগত নন। যদি তাই হয় তাহলে আপনারা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - অবস্থায় আমল আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ এই আর্টিকেলে হায়েজ কি এবং হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হায়েজ অবস্থায় আমল সম্পর্কে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হায়েজ অবস্থায় আমল
হায়েজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হায়েজ অবস্থায় আমল আর্টিকেলটিতে আপনাদের জন্য হায়েজ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

হায়েজ কি

হায়েজ শব্দটি অনেকের কাছেই অপরিচিত। অনেকই রয়েছেন এই শব্দটি পূর্বেও শুনেছেন আবার অনেকেই এই শব্দটি আগে কখনো শোনেননি। হায়েজ এমন একটি শব্দ যার অর্থ আমরা অনেকেই জানিনা। হায়েজ একটি আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ প্রবাহিত হওয়া। আমরা সকলেই জানি প্রতিটি নারীর জীবনে কিছু প্রাকৃতিক পরিবর্তন ঘটে। 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের একটি প্রাকৃতিক পরিবর্তন হচ্ছে মাসিক অথবা পিরিয়ড। আর এই শব্দের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। আর এই পিরিয়ড অথবা মাসিকের আরবি শব্দ হচ্ছে হায়েজ। শরীয়তের ভাষায় হায়েজ শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনরকম আঘাত ছাড়াই জরায়ু দ্বারা রক্ত প্রভাবিত হওয়া। আল্লাহ তাআলার মহিলাদের গর্ভে এক ধরনের রক্ত বের করেছেন যা জরায়ু দ্বারা শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। 

আর যখন কোন মহিলা কোন গর্ভধারণ করে তখন এই রক্ত সেই গর্ভবতী মহিলার বুকের দুধে পরিণত হয়। কোন মহিলা যতদিন না গর্ভধারণ করে ততদিন এই রক্ত জরায়ু দ্বারা বাইরে প্রভাবিত হয়। যা আমাদের মাঝে মাসিক, ঋতুস্রাব ও পিরিয়ড নামে পরিচিত।

হায়েজ কত দিন থাকে

হায়েজ কতদিন থাকে এই সম্পর্কে বিভিন্ন আলেমগণদের বিভিন্ন রকম মতামত পাওয়া যায়। অনেক আলেমগণ বলেন এর জন্য মহিলারা যতদিন গর্ভপাত হয় ততদিন তার জন্য হায়েজ। আবার কিছু কিছু আলেমগণ বলেছেন যে সর্বনিম্ন ১ দিন ও সর্বোচ্চ হচ্ছে ১৫ দিন সময়কে হায়েজ বলা হয়ে থাকে। আর এই মতামতে কে স্বীকৃতি দিয়েছে আরবের শাহরুখ বিন বায (র)। 

আবার অনেকেই বলেছেন যে সর্বনিম্ন ৩ দিন এবং সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত রক্ত প্রবাহ দেখা দিলে তাকে হায়েজ বলা হবে। যখন ১৫ দিনের বেশি হয়ে যাবে তখন তাকে হায়েজ বলা যাবে না তখন তা হবে ইস্তিহাদা। আর এই ইস্তিহাদা চলাকালীন ফরজ গোসল করে যেকোনো ইবাদত করা যাবে। একজন মহিলার যখন হায়েজ এর কারণে রক্ত প্রভাবিত হয় তখন এই রক্তের ঘ্রাণ সাধারণত রক্তের চেয়ে আলাদা হয়ে থাকে। 

যার সাহায্য খুব সহজেই সনাক্ত করা যায় প্রভাবিত রক্ত হায়েজ নাকি অন্য কোন কারণে। তাই ৩ দিন হোক অথবা ১৫ দিন কিংবা তার থেকে বেশি। যতদিন হায়েজ এর রক্ত প্রভাবিত হবে ততদিন সালাত অথবা কোরআন তেলোয়াত থেকে বিরত থাকাই উত্তম। হায়েজ এর রক্ত প্রদাহ বন্ধ হওয়ার পর আপনি ফরজ গোসল করে যে কোন ইবাদত করুন এটি সবথেকে উত্তম।

হায়েজ অবস্থায় আমল

হায়েজ অবস্থায় আমল করার ক্ষেত্রে অনেকের মাঝেই বিরম্বনা দেখা দিয়ে থাকে। কমবেশি আমরা সকলেই জানি হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়া এবং কোরআন তেলাওয়াত পড়া থেকে বিরত থাকতে হয়। হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়া এবং রোজা এই দুটোর ক্ষেত্রে আল্লাহতালা মাফ করেছেন। নামাজ একেবারে মাফ করা হলেও রোজার ক্ষেত্রে কাজা হিসেবে পরে সেই রোজা করে নিতে হয়। 

অনেকেই আছেন যারা মনে করেন হায়েজ অবস্থায় কোন রকম আমল করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে তারা তাদের আমলের খাতা শূণ্য করে রাখে। কিন্তু এটি আমাদের একেবারেই ভুল ধারণা। হায়েজ অবস্থায় কিছু কিছু আমল করতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক কিছু আমল করা সম্ভব। 

হায়েজ অবস্থায় নামাজ এবং কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকলেও বেশ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো আপনি করতে পারবেন। যেমন যেকোনো জিকির। আপনি হায়েজ অবস্থায় থাকাকালীন আল্লাহ তায়ালার যেকোনো নামের জিকির করতে পারেন। এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। এছাড়াও কুরআন শরীফে বেশ কিছু দোয়া রয়েছে যেই সকল দোয়া আমরা তেলাওয়াত হিসাবে নয় দোয়া হিসেবে পড়তে পারি। 

সেই সকল দোয়া আপনি নিঃসন্দেহে পড়ে আমল করতে পারেন। এছাড়াও বেশ কিছু ইস্তেগফার রয়েছে যে সকল ইস্তেগফার আপনারা হায়েজ অবস্থায় পড়তে পারবেন। তাই হায়েজ অবস্থায় গাফিলতি না দেখিয়ে তাআলার আমল করার চেষ্টা করুন।

হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি

অনেক নারী রয়েছে যার মনে প্রশ্ন জাগে হায়েজ অবস্থায় দরুদ পড়া যাবে কি? আপনার মনেও যদি এমন প্রশ্ন জাগে তাহলে সেই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব হ্যাঁ। হায়েজ অবস্থায় শুধুমাত্র নামাজ, রোজা ও কোরআন তেলোয়াত থেকে বিরত থাকার কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 

এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে একজন মহিলা হায়েজ অবস্থায় যেকোনো জিকির অথবা দোয়া পড়তে পারেন। তাই আপনিও হায়েজ অবস্থায় দুরুদ পড়তে পারবেন। দুরুদ শরীফ এর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ছোট ছোট দোয়া পড়তে পারেন।

হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর

আমাদের সকলের আজান শুনার সাথে সাথে আজানের উত্তর দেওয়া জরুরী। আজান চলাকালীন যেকোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি অবশ্যই যখন কোন ব্যক্তি আজান শুনবে তখন তার উচিত হবে আজানের উত্তর দেওয়া। 

এখন আপনাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যেহেতু হায়েজ অবস্থায় নামাজ পড়া ও কোরআন তেলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সেহেতু হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর দেওয়া যাবে কি। আপনি হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর দিতে পারবেন। হায়েজ অবস্থায় আজানের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন রকম বাধা-নিষেধ নেই।

হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়া যাবে

হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়া যাবে কি যাবে না যদি এই প্রশ্ন আপনার মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে তাহলে আমি বলব আপনি নিঃসন্দেহে হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি পড়তে পারেন। হায়েজ অবস্থায় আয়াতুল কুরসি সহ বিভিন্ন রকম ছোট ছোট দোয়ার ক্ষেত্রে কোনরকম বাধা-নিষেধ উল্লেখ করা হয় নি। 

তাই আপনি যদি চান ঘুমানোর আগে অথবা যেকোনো সময় আয়াতুল কুরসি পড়বেন তাহলে পড়তে পারেন। কিন্তু সেটি অবশ্যই আপনার মুখস্ত থাকতে হবে। কোনরকম হাদিসের বই অথবা কুরআন তেলাওয়াত করে আয়াতুল কুরসি করা যাবে না।

হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান

এখনকার সময়ে কিছু কিছু আলেম রয়েছেন যারা বলছেন যে হাইজ অবস্থায় কোরআন ছুঁতে পারবেন না কিন্তু কোরআন তেলোয়াত করতে পারবেন। এই কারণে অনেক সময় সাধারণ মানুষের মনে বিভিন্ন রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে হাদিস সম্পর্কে বিভিন্ন আলেমগন বিভিন্ন রকম মত প্রকাশ করে থাকেন আর সেই কারণে বিভ্রান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষগণ। কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল এই নিয়ে সৃষ্টি হয় দ্বিধা দ্বন্দ্ব। 

হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত পড়া যাবে এই নিয়েও এখন সৃষ্টি হয়েছে দ্বিধা দ্বন্দ্ব। অনেকেই বলছেন কোরআন ছোঁয়া যাবেনা কিন্তু তেলাওয়াত করা যাবে আবার অনেকেই বলছেন কোরআন ছোয়াও যাবে না এবং তেলাওয়াত ও করা যাবে না। তাই আমি এখন আপনাদের সামনে কিছু হাদিস এর হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করব।
  • হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন হায়েজ অবস্থায় থাকা মহিলারা নামাজ পড়তে পারবেন না এবং রোজা রাখতেও পারবেন না।( বুখারী,হাদীসঃ ২৯৮)
  • আরো একটি হাদিসে পাওয়া গেছে যেই মহিলার উপর হায়েজ এবং গোসল ফরজ হয়েছে এই মহিলা হায়েজ অবস্থায় জিকির করতে পারবে এবং আল্লাহর নাম নিতে পারবে।(সুনানে দারেমী, হাদিসঃ ৯৮৯)
  • রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হাফেজ অবস্থায় থাকা মহিলা এবং খরচ গোসল না করে কোন ব্যক্তি কোরআন পড়তে অথবা নামাজ পড়তে পারবে না।(সুনানে তিরমিযী, হাদিসঃ ১৩১)

হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি

হায়েজ অবস্থায় মোবাইলে কুরআন পড়া যাবে কি যাবে না তা যদি আপনার মনের সন্দেহ সৃষ্টি করে তাহলে তার উত্তর জেনে নিন। হায়েজ অবস্থায় কুরআন শরীফ স্পর্শ করা এবং তেলাওয়াত করা জায়েজ নয় তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন কোরআন শরীফ স্পর্শ করব না কিন্তু মোবাইলে কুরআন পড়বো তাহলে কোন পাপ হবে না। 

এটি আপনার একেবারেই ভুল ধারণা হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলোয়াত করতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটি হোক মোবাইলে কিংবা অন্য কোন কিছুতে। তাই হায়েজ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত থেকে বিরত থাকুন। কিছু কিছু আয়াত রয়েছে যেগুলো দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলো পড়তে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আপনারা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান - হাইয়েজ অবস্থায় আমল আর্টিকেলটি পড়ে হায়েজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আমরা অনেকেই রয়েছি যারা মনের ভেতর হায়েজ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে রেখেছি। আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের মাঝে হায়েজ সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা। 

আশা করছি আমি আপনাদের মাঝে হায়েজ সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি তুলে ধরতে পেরেছি। এরকম প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট দ্যা বর্ষা ঘুরে আসতে পারেন। আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী আর্টিকেল পড়ে দেখতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url