তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

আপনি কি তেলাপিয়া মাছ খেতে একেবারেই পছন্দ করেন না। যদি এমনটা হয় তাহলে তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তেলাপিয়া মাছে কি এলার্জি আছে এবং তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি।
তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি যদি তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেতে চান তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

তেলাপিয়া মাছে কি এলার্জি আছে

ইংরেজি Mozambique tilapia এর বাংলা অর্থ হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ। তেলাপিয়া মাছকে মিঠা পানির মাছ বলা হয়ে থাকে। এ ধরনের মাছ সাধারণত পুকুরে চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো এ ধরনের মাছ খাল ও বিলেও পাওয়া যায়। তেলাপিয়া মাছের দেহ চ্যাপ্টা ধরনের এবং আঁশগুলো বড় বড় হয়ে থাকে। তেলাপিয়া মাছ ডিম তার ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত মুখে করে ডিম নিয়ে থাকে। 

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারেন তেলাপিয়া মাছে কি এলার্জি আছে। সাধারণত মাছের মধ্যে ইলিশ ও চিংড়ি মাছ খাওয়ার কারণে এলার্জির মত সমস্যা হয়ে থাকে। ইলিশ ও চিংড়ি মাছকে এলার্জি জাতীয় মাছ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার ফলে এলার্জির মত কোন সমস্যা দেখা দেয় না। এজন্য বলা যায় যে তেলাপিয়া মাছে এলার্জি নেই। 

কিন্তু অনেকের অনেক কিছুতেই এলার্জি থাকতে পারেন। তাই কোন কোন ক্ষেত্রে তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার কারণে এলার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরকম এলার্জি যেই ব্যক্তির দেখা দিবে সেই ব্যক্তির সমস্যার কারণে হতে পারে। কিন্তু তেলাপিয়া মাছ খেলে যে এলার্জির মত সমস্যা হয় তা কিন্তু নয়।

তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

তেলাপিয়া মাছ সম্পর্কে আমাদের মনে দ্বিমত দেখা দিয়ে থাকে। কখনো কখনো জানা যায় তেলাপিয়া মাছ আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী আবার কখনো কখনো জানা যায় তেলাপিয়া মাছ আমাদের জন্য অপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে তেলাপিয়া খাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। 

কিন্তু পরে আবার এটিকে ভুল তথ্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনই অপকারিতাও রয়েছে। তাই এখন আপনাদের সামনে তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।

উপকারিতাঃ তেলাপিয়া মাছের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ রয়েছে। যে সকল পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার মাধ্যমে সে সকল পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। সেই সকল পুষ্টিগুণ গুলো হচ্ছে ভিটামিন বি১২,পটাশিয়াম,ক্যালরি,কার্বস,ফসফরাস,প্রোটিন,চর্বি,সেলেনিয়াম,নায়াসিন। 

তাই বলা যায় যে তেলাপিয়া আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তেলাপিয়া মাছ বহুমুখী খাদ্য হিসেবেও অনেক বেশি পরিচিত। কারণ তেলাপিয়া মাছ ভেজে কিংবা রান্না করে অথবা ভর্তা করেও খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও তেলাপিয়া মাছের প্রচুর পরিমাণে আমিষ পাওয়া যায়। যা খাবার মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের শরীরের আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে।

অপকারিতাঃ তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা চাইতে অপকারিতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে তেলাপিয়া মাছ আমাদের শরীরের জন্য যতটা উপকারী তার থেকে বেশি অপকারি। তাই অবশ্যই তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার পূর্বে বুঝে শুনে খাওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র কৃষি গবেষণায় তেলাপিয়া মাছের উপরে ৮০০ এর বেশি পরীক্ষা করা হয়েছে। 

যেই পরীক্ষার ফলাফল হচ্ছে তেলাপিয়া মাছ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় তেলাপিয়া মাছের শরীরে পাওয়া গেছে মারাত্মক বিষ। যা মানুষের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। তেলাপিয়া মাছকে আবর্জনার মাছ ও বলা হয়ে থাকে। 

কারণ এই মাছ সকল প্রকার খাবার খেয়ে জীবনধারণ করে। বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়, শেওলা, ময়লা আবর্জনা এগুলো হচ্ছে এ ধরনের মাছের প্রধান খাবার। আর যেই কারণে এই মাছ খাওয়ার ফলে হতে পারে মানুষের ক্ষতি। এছাড়াও তেলাপিয়া মাছ খাওয়ার ফলে হতে পারে এলার্জি, হাঁপানি ও স্থূলতা এর মত রোগ। 

এ সকল তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে তেলাপিয়া মাছের উপরে যে সব গবেষণা করা হয়েছে তা থেকে। কিন্তু এই তথ্যটিকে বাংলাদেশের মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রাণিসম্পদ সচিব মোঃ মাকসুদুল হাসান খান জানান বাংলাদেশের যে সকল তেলাপিয়া মাছ চাষ করা হয় তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নয়। তাই কোনরকম ভয় ছাড়াই নিঃসন্দেহে তেলাপিয়া মাছ খেতে পারেন।

পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকা একটি মাছ হচ্ছে পাঙ্গাস মাছ। যা খেতে অনেক সুস্বাদু। এটি মিষ্টি জলের মাছ। পাঙ্গাস মাছ নদীতে পাওয়া যায় এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ খুব সহজেই চাষ করা সম্ভব। পাঙ্গাস মাছ খেতে যেমন সুস্বাদু ঠিক সেরকম এর উপকারিতা ও রয়েছে। 

বিভিন্ন রকম উপকারিতার পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছের অপকারিতাও লক্ষ্য করা যায়। তাই অবশ্যই পাঙ্গাস মাছ যদি আপনার পছন্দের মাছ হয়ে থাকে তাহলে পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী। আপনাদের জানার জন্য পাঙ্গাস মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।

উপকারিতাঃ 
  • পাঙ্গাস মাছের কাঁটা কম থাকাই ছোট থেকে শুরু করে বড় সকলেই পাঙ্গাস মাছ খুব সহজেই খেতে পারে।
  • পাঙ্গাস মাছ অনেক বেশি পাতলা হওয়ার কারণে খুব সহজেই পাঙ্গাস মাছ দিয়ে বিভিন্ন রকম রেসিপি তৈরি করা যায়।
  • পাঙ্গাস মাছ থেকে যে সকল চর্বি পাওয়া যায় সেই সকল চর্বি আমাদের জন্য খুবই উপকারী।
  • পাঙ্গাস মাছের আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে এটি আমাদের কোলেস্টেরল কমাতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই কোলেস্ট্রল কমাতে চাইলে নিঃসন্দেহে পাঙ্গাস মাছ খেতে পারেন।
  • ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়ের জন্য পাঙ্গাস মাছ অনেক বেশি উপকারী। পাঙ্গাস মাছ ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম এ পরিপূর্ণ একটি মাছ। তাই পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার শরীরে ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। যার সাহায্যে আপনার হাড় এবং দাঁত অনেক বেশি সুস্থ থাকবে।
  • এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ আমাদের পেশী গঠনে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে যেমন পেশী শক্ত করে ও বেশি ভর বাড়াই।
  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতেও পাঙ্গাস মাছের ভূমিকা অনেক বেশি।
অপকারিতাঃ পাঙ্গাস মাছের উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে আজকাল পাঙ্গাস মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ অনেক বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর সেই সকল পাঙ্গাস মাছ খাওয়ার কারণে হতে পারে বিভিন্ন রকমের রোগ। 

এছাড়াও পাঙ্গাস মাছ ভালো রাখার জন্য আজকাল বিভিন্ন রকম প্রিজারভেটি ও এন্টিবায়োব্যাটারী ব্যবহার করা হচ্ছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। সাধারণত পাঙ্গাস মাছ এর ভেতর কোনরকম অপকারী পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পাঙ্গাস মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে এবং ভালো রাখার ক্ষেত্রে যে সকল বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করা হয় তা আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক।

রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

বাঙ্গালীদের পছন্দের মাছের মধ্যে একটি মাছ হচ্ছে রুই মাছ। এই মাছ গ্রাম থেকে শহরে সকল জায়গায় খুব সহজেই সহজল্ভ্য দামে ক্রয় করা যায়। তাই এই মাছ সকলেই অনেক বেশি পছন্দ করে থাকে। এই মাছ মিষ্টি জলের মাছ হওয়ায় এটির স্বাদ অনেক বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে। 

এই মাছ পুকুরে চাষ করা হয়ে থাকে। এই পছন্দের মাছের আমরা অনেকেই উপকারিতা কি এবং অপকারিতা কি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা। আমাদের সকলের উচিত কোন কিছু খাওয়ার পূর্বে তার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জেনে সচেতন থাকা। এখন রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো জেনে নিন।

উপকারিতাঃ রুই মাছ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। রুই মাছ আমাদের শরীর ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই নিয়মিত রুই মাছ খাওয়া উচিত।
  • আমাদের মস্তিষ্ক ভালো রাখার ক্ষেত্রে রুই মাছের ভূমিকা অনেক বেশি।
  • রুই মাছকে আমিষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলা হয়ে থাকে। তাই আমিষের চাহিদা মেটাতে নিঃসন্দেহে রুই মাছ খেতে পারেন।
  • রুই মাছের ভেতর উপস্থিত রয়েছে ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড় এবং দাঁতের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
  • রুই মাছে উপস্থিত রয়েছে প্রোটিন। যা আমাদের শরীরের টিস্যু ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এছাড়াও রক্তে জমাট বাঁধার মত সমস্যা সমাধানে রুই মাছ অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে।
  • বিভিন্ন রকম চোখের সমস্যা সমাধান করতে আপনি নিয়মিত রুই মাছ আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
  • রুই মাছ আমাদের হার্ট ভালো রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
অপকারিতাঃ অবশ্যই আমাদের রুই মাছের উপকারিতা জানার পাশাপাশি রুই মাছের অপকারিতা সম্পর্কেও জানা জরুরী। রুই মাছের অপকারিতা বলতে গেলে নির্দিষ্ট কোন অপকারিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই মাছ খাওয়ার কারণে শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে কোনরকম সমস্যা দেখা দেয় না। কিন্তু মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আপনারা তেলাপিয়া মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলটি পোরে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও রুই এই তিন ধরনের মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। যেহেতু আমরা বাঙালি আমাদেরকে মাছে ভাতে বাঙালি বলা হয়ে থাকে। 

তাই আমাদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে মাছ। আমাদের সকলের শরীরের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষের চাহিদা রয়েছে। আর মাছের সাহায্যে আমরা খুব সহজেই সেই আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারি। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই মাছ রাখতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url