আলুর কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে তা জেনে নিন
কীটনাশক ঔষধের নাম সম্পর্কে জেনে নিনবর্তমান সময়ে সকল সবজির সাথে আলু এর ও দাম অনেক বেশি। আর সেই কারণে আলু চাষিরা
আলু চাষ করে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। একজন আলু চাষি তখনই লাভবান হয় যখন
স্বল্পমূল্যে অধিক পরিমাণে আলু চাষ করতে পারেন। যার সব থেকে বড় বাধা হচ্ছে আলুর
বিভিন্ন রকম রোগ। আর আমরা সেই কারণে আপনাদের সামনে আজকে আলুর কোন রোগ ব্যাপক
ক্ষতি করে আর্টিকেল দ্বারা আলুর বিভিন্ন রকম রোগ সম্পর্কে পরিচিতি করাবো। আপনারা
আলুর কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে আর্টিকেল দ্বারা আলুর রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন রকম
তথ্য জানতে পারবেন।
বিভিন্ন রকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আর্টিকেলটি বিস্তারিতভাবে পড়তে হবে।
আর্টিকেলের মাঝে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যা জানলে একজন কৃষক খুব সহজে
লাভবান হতে পারবে।
আলু চাষের পদ্ধতি
আলু চাষ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু কথা মাথায় রেখে আপনাকে কাজ করতে হবে। আলু চাষ
করে যদি লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে সেই সকল ধাপ
আপনাকে সঠিক নিয়মে পালন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ পেঁপে গাছের মজাইক রোগের প্রতিকার
আলুর বীজ উৎপাদনে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে নয়তো ভালো
লাভ করা সম্ভব হবে না। আলোর বীর উৎপাদন করার ক্ষেত্রে কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করতে
হবে চলুন একসাথে সংক্ষেপে জেনে নেই।
- আলুর বীজ উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম জমি নির্বাচন করতে হবে এবং জমি তৈরি করতে হবে। আলু চাষের জন্য দোআঁশ মাটির জমি নির্বাচন করতে হবে। এরপর ৫ থেকে ৬ বার চাষ করে এবং মই দিতে হবে যেন মাটি ভালো ভাবে ঝুরঝুরা হয়ে যায়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে মাটি যেন খুব বেশি শুকনো না হয়ে যায়।
- এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে আলুর বীজগুলো ভালোভাবে শোধন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা যখন আলুর অংকুর গজাই সেই সময়ের পূর্বে বরিক এসিড দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এজন্য আপনারা এক লিটার পানি এবং ত্রিশ গ্রাম বরিক এসিড মেশাবেন এবং সেই পানিতে আলু কিছুক্ষণ চুবিয়ে রেখে পানি থেকে বের করে শুকাতে হবে।
- পরবর্তী ধাপ বীজ প্রস্তুত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা কাঁটা আলু ব্যবহার না করে একটি গোটা আলু ব্যবহার করবেন এক্ষেত্রে আলুর উৎপাদন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু অবশ্যই যে আলু রোপণ করবেন তাতে একটি না হলে দুইটি চোখ থাকতে হবে।
- পরবর্তী ধাপে মাটিতে যেই সকল ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে সে সকল ঔষধ সঠিক সময়ে এবং সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে আলুর রোগ বালাই কম হবে। এছাড়াও যে সময় যে সকল সারের প্রয়োজন হবে সে সকল সার সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে।
- আলু চাষের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেচ ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। যদি জমির মাটিতে রস না থাকে তাহলে অবশ্যই পানির সেচ দিতে হবে কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ পানির সেচ দেওয়া যাবে না এতে করে বীজ পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আলুর বীজ রোপণের পর অবশ্যই ৬০ দিন পর্যন্ত আলুর জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে। জমিতে আগাছা ছোট থাকা অবস্থাতেই তুলে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। কিছু কিছু আগাছা রয়েছে যে সকল আগাছা বিভিন্ন রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে তাই অবশ্যই প্রতিটি আগাছা ছোট অবস্থাতেই তুলে ফেলতে হবে।
- পরবর্তী ধাপ হচ্ছে মাটি উঠিয়ে দেয়া। আলুর বীজ রোপণ করার পর ভেলি বরাবর মাটি উঠাতে হবে। আর এমন ভাবে যখন আলুর বৃদ্ধি হবে তখন আরও একবার মাটি উঠতে দিতে হবে যাতে করে আলু বেরিয়ে না আসে।
- আলুর বীজ রোপণ করার পর বিভিন্ন রকম পোকামাকড় এর আক্রমণ হবে সেই সকল পোকা দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিছু কিছু উপকার হয়েছে সেই সকল পোকা আলু গাছকে একেবারেই নষ্ট করে দেয়। তাই অবশ্যই এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- উপরোক্ত সকল কাজ করার পর যেটি করতে হবে তা হচ্ছে হাম পুলিং। আর হাম পুলিং হচ্ছে আলু উঠানোর 7 থেকে 10 দিন পূর্বে গাছ উপড়ে ফেলতে হবে। গাছ উপরে ফেললে শিকড় সহ গাছ বের হবে কিন্তু আলু মাটির নিচেই থেকে যাবে।
- সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে আলুর উত্তোলন করতে হবে এবং আলু সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। আলু তুলে নিয়ে এসে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে এবং আলোর গায়ে যদি কোন রকম দাগ অথবা আঘাত থাকে তাহলে সেই সকল আলুকে আলাদা করে রাখতে হবে এবং ভালো আলু গুলো আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
আলু চাষের উপযুক্ত সময়
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের রয়েছে ছয়টি ঋতু। আর এই ছয়টি ঋতুর একেক ঋতুতে চাষ
করা হয় একেকরকম সবজি। ঠিক সেইরকম আলু চাষ করার ও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট ঋতু অথবা
সময়। যেকোনো ঋতুতে অথবা যেকোনো সময়ে আলু চাষ করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে
না।
আরও পড়ুনঃ লাউ গাছের পাতা কোকড়ানো রোগ
আলু চাষ করে লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই সঠিক সময়ে আলু চাষ করতে হবে। আলু চাষ করার
উপযুক্ত সময় হচ্ছে বাংলা মাসের কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে অগ্রহায়ণ এর
মাঝামাঝি পর্যন্ত। যেটিকে ইংরেজিতে বলা যায় যে নভেম্বর মাস।
নভেম্বর মাসকেই আলু চাষের জন্য উপযুক্ত মাস বলা যায়। আর তাইতো নভেম্বর মাসে
প্রতিটি কৃষকে আলু চাষ শুরু করতে দেখা যায়। আপনি যদি মনে করেন যে আলু চাষ করে
লাভবান হবেন তাহলে এই সময়ের মধ্যেই আলুর বীজ রোপণ করতে হবে।
আলুর কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে
যেকোনো ফসল কিংবা সবজি উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়
বিভিন্ন রকমের রোগ বালাই। বিভিন্ন রকম রোগ বালাই এর কারণে উৎপাদিত ফসল এর অনেক
ক্ষতি হয়। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক সময় কৃষককে লোকসানের
মুখোমুখি হতে হয়।
আরও পড়ুনঃ গরু মোটাতাজা করনের ঔষধের নাম
ঠিক সেইরকম আলু চাষ করার ক্ষেত্রেও আলু চাষিদের বিভিন্ন রকম আলুর রোগ বালাই এর
সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু একটি রোগ রয়েছে যে রোগ আলুর ব্যাপক ক্ষতি করে। আলুর
কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে তা কি আপনারা বলতে পারবেন?
যদি না পারেন তাহলে আমরা বলে দিচ্ছি। আলুর ব্যাপক ক্ষতি করে লেট ব্লাইট অর্থাৎ
নাবী ধসা রোগ। এখন আমরা আপনাদের সামনে এই রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদেরকে
জানাবো।
লেট ব্লাইট রোগের লক্ষণঃ
- গাছের পাতাতে হালকা এবং গাঢ় সবুজ বৃত্তাকার দেখা দিবে।
- পাতাগুলো হালকা হালকা পানি ভেজা মনে হবে।
- কিছু সময়ই যাওয়ার পর পাতার ভেতর গাঢ় বাদামে অথবা কালো দাগ দেখা দিবে।
- ঠাণ্ডা এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় এই রোগের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- গাছের পাতার নিচের দিকে সাদা সাদা চুনের মত দেখতে অসংখ্য জীবাণু লেগে থাকে।
- আস্তে আস্তে পুরো গাছটি কালো হয়ে মরে যাই এবং নুয়ে পড়ে।
- উপরের গাছ এর পাশাপাশি মাটির নিচের আলু ও আক্রান্ত হয়।
- আলুর গায়ে হালকা বাদামী রঙের ক্ষত অথবা দাগ দেখতে পাওয়া যায়।
- আস্তে আস্তে এই রং পরিবর্তন হয়ে গাঢ় হয়।
লেট ব্লাইট রোগের ক্ষেত্রে করনীয়ঃ
কিছু করণীয় রয়েছে যে সকল করণীয় আপনারা যদি পূর্বেই গ্রহণ করেন তাহলে এ রোগ
থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব তাইতো আমরা আমাদের এই অংশে আপনাদের সুবিধার্থে এ রোগে
আক্রান্তের পূর্বে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং আক্রান্ত হওয়ার পর কি কি
পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা আলোচনা করেছি।
পূর্ব প্রস্তুতিঃ
- আলুর বীজ সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- আলুর গাছের গোঁড়ার মাটি উঁচু করে দিতে হবে এতে করে আলু রোগে আক্রান্ত কম হবে।
- ভেজা অবস্থায় কখনো আলু সংগ্রহের জন্য উঠানো যাবে না। আলু উঠানোর পূর্বে জমি ভালোভাবে শুকিয়ে তারপর আলু তুলতে হবে।
- এই রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ছত্রাক নাশক ঔষধ ডাইথেন এম ৪৫ অথবা পেনকোজেব ৮০ ডব্লিউ পি ব্যবহার করতে হবে।
আক্রান্ত হলে করণীয়ঃ
- যদি কোনও জমি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে সেদিন থেকে জমিতে পানি সেচ বন্ধ করে দিতে হবে যতদিন না এই রোগ নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়।
- আশেপাশের জমিতে যখন এ রোগ দেখা দেবে তখন জমিতে এক্রোবেট এম জেড,সিকিউর ৬০০ ডব্লিউজি ইত্যাদি যেকোনো ধরনের ছত্রাকনাশক ঔষধ চার থেকে পাঁচ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে।
- যদি কোন গাছে এই রোগ দেখা দেয় তাহলে সেই রোগ তৎক্ষণাৎ তুলে ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- এ রোগ যেহেতু ঠাণ্ডা অবস্থাতে বেশি বৃদ্ধি পায় তাই জমি শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
আলু চাষে সার প্রয়োগ
আমরা এখন আমাদের আর্টিকেলের এই অংশে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো আলু চাষে সার
প্রয়োগ কিভাবে, কতটুকু এবং কখন প্রয়োগ করবেন। মাড়াইয়ের ৮০ থেকে ৯০ দিন পর গোবর
প্রয়োগ করতে হবে ৮-১০ টন।
এছাড়াও এমপি, জিপসাম, অর্ধেক ইউরিয়া ও জিংক সালফেট রোপণের সময় জমির মাটির সাথে
ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া
প্রয়োগ করতে হবে।
আলু চাষে কীটনাশক
আলু চাষে যে সকল কীটনাশক ব্যবহার করা হয় আমরা এখন আপনাদের সামনে সেই সকল
কীটনাশকের নাম সংক্ষিপ্ত রূপে আলোচনা করব। আশা করছি আপনারা এই অংশটি পড়ে আলু
চাষে যে সকল কীটনাশক ব্যবহৃত হয় সেগুলোর সাথে পরিচিত হবেন।
- মিমসাইপার ১০ ইসি-কীটনাশক
- মিমস্টার ২৫ ইসি-আগাছানাশক
- হাইড্রোকব ৭৭ ডব্লিউ পি-ছত্রাকনাশক
- আশামিল ৭২ ডব্লিউ পি-ছত্রাকনাশক
- আশাব্যান ৪৮ ইসি-কীটনাশক
- কিমিয়া ২১.৫ ডাব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- গোল্ডহোপ ৭৫ ডাব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- বায়োগ্রীন প্লাস-পিজিআর
- বিন্দু ৬০ ডাব্লিউ জি-ছত্রাক নাশক
- সেলফি ৩৬ ডব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- নীলাজল ৭০ ডাব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- আশাজেব ৮০ ডব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- অক্সিকব ৫০ ডব্লিউ পি-ছত্রাক নাশক
- সেতারা ৫৫০ ইসি-কীটনাশক
শেষ কথা
আমরা আমাদের আর্টিকেল আলুর কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে এর দ্বারা আলু চাষ সম্পর্কে
আপনাদের সামনে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা তুলে ধরেছি আপনারা আলু
চাষ করার ক্ষেত্রে কোন কোন কীটনাশক ব্যবহার করবেন এছাড়াও কিভাবে আলু চাষ করলে সব
থেকে বেশি লাভবান হবেন।
আলু এমন একটি সবজি যেটির বাজারে চাহিদা সব সময়
থাকে। এটি নির্দিষ্ট একটি সময়ে চাষ করা হলেও সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যবহার
করা হয়ে থাকে। তাই আলু চাষ করে লাভবান হতে চাইলে আলু চাষের সময় যেমন ভালোভাবে
খেয়াল রাখতে হবে ঠিক তেমন আলু তোলার পর সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিশেষ নজর দিতে হবে।
কারণ সংরক্ষণ যদি সঠিকভাবে না করা হয় তাহলে আলু চাষ করে বড় লোকসানের মুখোমুখি
হতে হবে।
দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url