তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় জেনে নিন

কিসের গন্ধে ইঁদুর পালায় জানুনআপনাদের বাসায় অতিরিক্ত মশা থাকার কারণে আপনি কি ডেঙ্গু জ্বরের ভয় পাচ্ছেন। চাচ্ছেন যে কোন উপায়ে বাসা থেকে মশা কমাতে। যদি এমনটা হয় তাহলে আপনি অবশ্যই তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আর্টিকেলটি পড়ুন। তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আর্টিকেলে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মশা মারার ঔষধের নাম এবং তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়।
তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়
আশা করছি আপনারা তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আর্টিকেলটি পড়ে যে তথ্যটি জানতে চাইছেন সেটি খুঁজে পাবেন। তাই প্রয়োজনীয় তথ্যটি পেতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

মশার আয়ু কত দিন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৫০০ প্রজাতির মশা রয়েছে। মশারা বিভিন্ন ধরনের প্রাণী এবং মানুষের রক্ত খেয়ে জীবন যাপন করে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু মশা রয়েছে যারা রক্ত খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ছড়ায়। আর সেই কারণে মানুষ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও ফাইলেরিয়া এর মত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। 
বিশেষ করে বেশ কয়েক বছর ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আর এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ ও করেছে। মশা দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত পুরুষ মশা ও দ্বিতীয়ত স্ত্রী মশা। স্ত্রী মশার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় তারা বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীর রক্ত খেয়ে থাকে। পুরুষ মশার চাইতে স্ত্রী মশার জীবনচক্র বেশি হয়। 

অর্থাৎ একটি পুরুষ মশার চাইতে স্ত্রী মশা বেশিদিন বাঁচে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে একটি পুরুষ মশা বেঁচে থাকে শুধুমাত্র একদিন। আর অপরদিকে একটি স্ত্রী মশা বেঁচে থাকে ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত। তাহলে আপনারা অবশ্যই বুঝতে পারলেন মশার আয়ু কত দিন। মশা খুব বেশি দিন না না বাঁচলেও কখনো কখনো আমাদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসে।

মশা তাড়ানোর উপায় কি 

সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে যেন মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। অনেকেই সন্ধ্যা থেকেই মশারির নিচে বসে থাকে। আবার অনেকে ব্যবহার করে কয়েল। আর দুটোই কখনো কখনো বিরক্তবোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কয়েলে রয়েছে বিষাক্ত পদার্থ। যার কারনে আপনার বাসায় থাকা ছোট বাচ্চার হতে পারে ক্ষতি। 
তাই আপনি বাসায় মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এখন আপনি মনে মনে ভাবতে পারেন মশা তাড়ানোর উপায় কি। আপনার মনেও যদি এমনটা প্রশ্ন জাগে তাহলে আপনাদের প্রশ্নের উত্তর আমি দেবো। আমি এখন আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব কিভাবে আপনি ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা তাড়াবেন।

নিমের তেলঃ আমরা সকলেই জানি নিমের তেল আমাদের ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ও এলার্জির মত সমস্যা সমাধানের জন্য নিমের তেল অনেক বেশি সাহায্য করে। ঠিক তেমনই মশার সমস্যার সমাধান করতেও নিমের তেল অনেক বেশি সাহায্য করে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে আপনি কিছুটা নিমের তেল এবং কিছুটা নারকেল তেল একসাথে মিশিয়ে আপনার ত্বকে লাগিয়ে নিন। দেখবেন মশা আপনার থেকে অনেক দূরে থাকবে।

তুলসীঃ তুলসির পাতা আমাদের কাশি দূর করতে কার্যকরী উপাদান হিসেবে পরিচিত। তুলসীর পাতা যেমন আমাদের কাশির জন্য উপকারী ঠিক তেমন তুলসীর গাছ আমাদের মশা তাড়ানোর কাজে উপকারী। আপনার বাসার আশেপাশে কয়েকটি তুলসীর গাছ লাগিয়ে নিন। দেখবেন আপনার বাসায় অতিরিক্ত মশার সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।

রসুনঃ রসুন আমাদের শরীরের উপকার করার পাশাপাশি মশা তাড়াতেও অনেক বেশি সাহায্য করে। রসুনের কোয়া থেতলিয়ে পানির ভেতর দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি যদি আপনি আপনার পুরো বাসায় স্প্রে করেন তাহলে দেখবেন আপনার বাসা থেকে মশা পালিয়ে গেছে।

সুগন্ধি ব্যবহারঃ যেকোনো সুগন্ধি থেকে মশা অনেক দূরে থাকে। তাই মশার সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি ঘুমানোর আগে আপনার শরীরে যেকোনো ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে মশা আপনার থেকে অনেক দূরে থাকবে এবং মশা কম দেখা যাবে।

বৈদ্যুতিক বাতিঃ কিছু কিছু বৈদ্যুতিক বাতি রয়েছে যে সকল বাতির আলো থেকে মশা অনেক দূরে থাকে। যেমন হলুদ রঙের বৈদ্যুতিক বাতি। হলুদ আলো মশা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই বাসায় যদি হলুদ রঙের বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেন তাহলে বাসা থেকে মশা অনেক দূরে থাকবে।

লেবুঃ লেবু ও লবঙ্গের মিশ্রণ মশার উপর যাদুকরী প্রভাব ফেলে। একটি লেবু কেটে যদি তার ভেতর কয়েক টুকরা লবঙ্গ গেঁথে একটি প্লেটে সেই লেবুগুলো রেখে ঘরের যে কোন স্থানে রেখে দিন তাহলে খুব সহজেই মশার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

লেমন গ্রাসঃ লেমন গ্রাস থেকে এক ধরনের সুগন্ধি বের হয় যা মশারা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই আপনি মশার সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চাইলে তবে লেমন গ্রাস লাগাতে পারেন। এতে করে লেমন গ্রাসের সুগন্ধির কারণে মশা আপনার বাসা থেকে অনেক দূরে থাকবে।
জমানো পানিঃ আমাদের বাসার আশেপাশে দীর্ঘদিন পানি জমা থাকলে সেই পানিতে মশা ডিম পারে ফলে মশার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যদি চান আপনার বাসায় মশার উপদ্রব কম হোক তাহলে বাসার আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন।

চা পাতাঃ আমরা অনেকেই চা বানানোর পরে চা পাতা গুলো ফেলে দেই। কিন্তু সেই চা পাতা না পেলে সেগুলো মশা তাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। চা পাতাগুলো ভালোভাবে শুকানোর পরে সেই চাপাতা দিয়ে ধুনো দিলে মশা দূরে থাকবে।

কর্পূর দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়

কর্পূর এমন একটি উপাদান যা দিয়ে খুব সহজেই বাসার মশা তাড়ানো সম্ভব। কর্পূর দিয়ে আপনি আপনার বাসায় অতিরিক্ত মশা থাকার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। তাই আপনি যদি আপনার বাসার মশার সমস্যা সমাধান করতে চান তাহলে নিঃসন্দেহে কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন।

কিভাবে ব্যবহার করবেনঃ যেকোনো ফার্মেসি থেকে প্রথমে কর্পূর ট্যাবলেট নিয়ে আসুন। এবার সেই ৫০ গ্রামের ট্যাবলেট যেকোনো একটি ছোট পাত্রে রাখতে হবে। এবার যেই পাত্রে কর্পূর রাখা হয়েছে সেই পাত্রটি পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবে। 

এবার পানি ভর্তি পাত্রটি ঘরের যে কোন কোনায় রেখে দিন। দেখবেন কিছুক্ষণ এর ভেতর আপনার ঘরের মশার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। মনে করে পাত্র তে রাখা পানি দুইদিন পর পরিবর্তন করতে হবে। আপনি যদি কর্পূরের ব্যবহার এভাবে করেন তাহলে এর রেজাল্ট চোখে দেখতে পাবেন।

তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায়

আপনি যদি মশার উপদ্রবে অনেক বেশি বিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং হাতের কাছে কোন কিছু না পান সেই মশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তাহলে রান্নাঘরে যান। কারণ রান্না ঘরেই রয়েছে এমন একটি উপাদান যা দ্বারা আপনি আপনার মশার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। 

নিশ্চয়ই আপনি জানতে চাচ্ছেন কোন সেই উপাদান। সেটি হচ্ছে তেজপাতা। তেজপাতা দিয়ে আপনি আপনার মশার সমস্যা সমাধান করতে পারবেন। তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আলোচনা করলাম।

কিভাবে ব্যবহার করবেনঃ কর্পূর এর সাথে নিমের তেল মিস করুন। এবার এই দুটি মিশ্রিত উপাদান তেজপাতার গায়ে ভালোভাবে লাগাতে হবে। স্প্রে করুন অথবা হাত দিয়ে পুরো তেজপাতা জুড়ে মিশ্রণটি লাগান। 

মিশ্রণটি লাগানো হয়ে গেলে তেজপাতায় আগুন ধরাতে হবে। তেজপাতায় আগুন লাগার ফলে যেই ধোঁয়া সৃষ্টি হবে তার কারণে মশারা অনেক দূরে পালাবে। এভাবে রান্নাঘরের থাকা একটি সাধারণ উপাদান দিয়ে আপনার ঘরের মশার সমস্যা দূর করতে পারবেন।

গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়

অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় গোয়াল ঘরের আশেপাশে প্রচন্ড মশা রয়েছে। মশার কারণে গরু বিরক্ত হয়ে ওঠে এবং লাফালাফি শুরু করে। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যে সকল পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি আপনার গোয়াল ঘরের মশা খুব সহজেই তাড়াতে পারবেন। এখন জেনে নিন গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর উপায়।

নিমের তেল ব্যবহারঃ নিমের তেল এমন একটি উপাদান যা থেকে মশা অনেক দূরে থাকে। তাই আপনার গবাদি পশুকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে গবাদি পশুর গায়ে নিমের তেল মাখাতে পারেন। এতে করে মশারা আপনার গবাদি পশুর থেকে দূরে থাকবে।

কেরোসিন তেল স্প্রেঃ আপনি যদি চান আপনার গোয়াল ঘরে মশার উপদ্রব কম হোক তাহলে নিয়মিত কেরোসিন তেল এর স্প্রে করুন। আপনি যদি নিয়মিত কেরোসিন তেলের স্প্রে করেন তাহলে দেখবেন দেখবেন মশার সমস্যা দূর হয়ে গেছে।

নারকেলের আঁশ পোড়ানোঃ আপনি নিয়মিত আপনার গোয়াল ঘরে নারিকেলের আস পুড়িয়ে ধোঁয়া দিতে পারেন। নারকেলের আঁশ পোড়ানোর পর তা থেকে যে ধোয়া নির্গত হয় তা মশা তাড়াতে অনেক বেশি সাহায্য করে।

নিম পাতা পোড়ানোঃ গোয়াল ঘরের মশা তাড়ানোর জন্য নিমপাতা পোড়াতে পারেন। নিমপাতা কুড়িয়ে সেগুলো শুকিয়ে নিতে হবে। এবার এই নিম পাতা পুড়িয়ে গোয়াল ঘরের এক কোনায় দোয়া তৈরি করুন। দেখবেন আপনার গোয়াল ঘরের সব মশা দূর হয়ে গেছে।

মশা মারার ঔষধের নাম

আগেকার যুগে মানুষ মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মশারি ব্যবহার করত। তাছাড়াও দেখা যেত ধোঁয়া দিয়ে মশা দূর করার প্রথা। সময় যত যাচ্ছে মশা থেকে মুক্তি পাওয়ার বিভিন্ন ধরনের কয়েল এবং স্প্রে আবিষ্কার হচ্ছে। মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন বাজারে অনেক রকম স্প্রে এবং কয়েল পাওয়া যাচ্ছে। 

বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলেছেন যে এখন এই দেশে প্রায় ৪৫০ এর থেকেও বেশি মশা মারার ঔষধ পাওয়া যায়। এ সকল ঔষধ দ্বারা খুব সহজে মশা মারা যায় ঠিকই কিন্তু এ সকল ঔষধ এবং স্প্রে মানুষের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক। এই সকল স্প্রে ব্যবহারের কারণে মানুষের ও বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। 

এখন আপনি কিভাবে বুঝবেন কোন কোন ঔষধ অথবা স্প্রে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। যে সকল স্প্রে অথবা ঔষধ ব্যবহারের পর ঘরের মশার সাথে সাথে অন্যান্য কীট পতঙ্গ অথবা টিকটিকি যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে বুঝবেন সেটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। তাই বাজার থেকে যেকোনো ঔষধ অথবা স্প্রে কিনে ব্যবহার করবেন না। 

ব্যবহার করার পূর্বে বুঝে শুনে সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবহার করতে হবে। আমি আপনাদের সামনে কোন মশা মারা ঔষধের নাম উল্লেখ করলাম না। বাজারে এখন অনেক ধরনের মশা মারার ঔষধ এবং স্প্রে পাওয়া যাচ্ছে। আপনি বাজারে গিয়ে ভালো মানের যে কোন একটি ঔষধ অথবা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আপনারা তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়ানোর উপায় আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন কিভাবে তেজপাতা দিয়ে মশা তাড়াবেন এবং কোন উপায়ে আপনারা আপনাদের গোয়াল ঘরের মশা তাড়াবেন। 

আপনি যদি আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে পেয়েছেন। আমি প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিয়মিত আর্টিকেল লিখে থাকি। তাই দ্যা বর্ষা ওয়েবসাইট এর সাথে থাকুন এবং নিয়মিত আমার লেখা আর্টিকেলগুলো পড়ুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url