সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

যখন আমরা খাবারের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টি পাই না, তখন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করা হয়। আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে শরীরে অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

এই ঘাটতি পূরণ করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফুড সাপ্লিমেন্ট, যেমন- ভিটামিন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল খায়। তবে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ভালো ধারণা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলে সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। 

সাপ্লিমেন্ট কি

আমাদের শরীরে যেসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে, ফুড সাপ্লিমেন্ট সেগুলো পূরণ করে। তাই শরীর সুস্থ রাখতে আমাদেরকে বাড়তি পুষ্টির জন্য সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়।

এগুলোকে সাধারণত ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, পাউডার বা তরল আকারে খাওয়া হয়। যেমন-ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে, ক্যালসিয়ামের সাপ্লিমেন্ট খেতে হয়।

সাপ্লিমেন্ট এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান যোগান দেওয়া যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদান গুলির মধ্যে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড বা অন্যান্য পদার্থ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা দৈনিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।

ফুড সাপ্লিমেন্ট কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য নয়। এগুলো শুধুমাত্র আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা হলো- পুষ্টির ঘাটতি পূরণ, স্বাস্থ্য উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শারীরিক বৃদ্ধি, হাড় মজবুত করা, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা ইত্যাদি।

  • পুষ্টির ঘাটতি পূরণ: খাদ্যতালিকায় অনুপস্থিত ভিটামিন, খনিজ বা অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে।

  • সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতি: কিছু সাপ্লিমেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

  • শারীরিক কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি: ক্রীড়াবিদদের জন্য তৈরি সাপ্লিমেন্ট ব্যায়ামের পরে পেশির শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে।

  • ওজন হ্রাসে সহায়ক: কিছু সাপ্লিমেন্ট বিপাক বাড়ায়, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

  • হজম স্বাস্থ্য উন্নয়ন: প্রোবায়োটিক ও এনজাইম যুক্ত সাপ্লিমেন্ট হজম ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখে ও হজমের উন্নতি ঘটায়।

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার অপকারিতা

অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শরীরে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা বাড়তে পারে, যা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন-

  • ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

  • ভিটামিন ই অতিরিক্ত হলে রক্ত পাতলা হতে পারে।

  • সেলেনিয়ামের মতো মিনারেলের পরিমাণ বেড়ে গেলে টক্সিসিটি তৈরি হতে পারে।

বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট

বাজারে বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যেগুলো নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে  সাপ্লিমেন্টে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধরন উল্লেখ করা হলো:

ভিটামিন ও মিনারেল: এই ধরনের সাপ্লিমেন্টে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল যেমন- ভিটামিন A, C, D, E, K, B কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ইত্যাদি থাকে। এগুলো সাধারণত পুষ্টির ঘাটতি পূরণ বা বিশেষ পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

ফ্যাটি অ্যাসিড: ওমেগা-৩, ওমেগা-৬, ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট হার্ট, মস্তিষ্ক এবং ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এসব ফ্যাটি অ্যাসিড মূলত চর্বিযুক্ত মাছ, বীজ এবং উদ্ভিজ্জ তেলে পাওয়া যায়।

প্রোটিন: প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট সাধারণত ক্রীড়াবিদ ও যারা শরীরে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে চান, তাদের জন্য জনপ্রিয়। এগুলো সাধারণত হুই প্রোটিন, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, কেসিন ইত্যাদির আকারে পাওয়া যায় এবং পেশি পুনর্গঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়ক।

খেলাধুলার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট: এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট বিশেষ করে খেলাধুলার কর্মদক্ষতা এবং পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এগুলোতে creatine, beta-alanine, BCAAs (Branched-Chain Amino Acids) থাকে যা শক্তি, সহনশীলতা এবং স্ট্যামিনা বাড়াতে সহায়ক। যারা নিয়মিত জিম করে তাদের জন্য জিম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়।

হাড়ের জন্য সাপ্লিমেন্ট: হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন। এসব সাপ্লিমেন্ট অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ ও হাড় শক্তিশালী করতে সহায়ক।

হজমে সাহায্যকারী সাপ্লিমেন্ট: হজমে সাহায্যকারী সাপ্লিমেন্টে প্রোবায়োটিক, ডাইজেস্টিভ এনজাইম এবং ডায়েটারি ফাইবার থাকে। এগুলো হজমের ভারসাম্য বজায় রাখতে, হজম উন্নত করতে এবং পুষ্টির শোষণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের জন্য সাপ্লিমেন্ট: মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কিছু সাপ্লিমেন্ট জনপ্রিয়। এতে ওমেগা-৩, ভিটামিন বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে, যা স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও মানসিক অবস্থার উন্নতি করতে সহায়ক।

কখন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন

  • পুষ্টির অভাব: যাদের শরীরে পুষ্টির অভাব রয়েছে, তাদের ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত।

  • গর্ভবতী নারীরা: গর্ভবতী নারীদের জন্য কিছু সাপ্লিমেন্ট  জরুরি।

  • বুকের দুধ খাওয়ানো মা: মায়েরা, যারা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাদের ফলিক এসিড ও ভিটামিন ডি প্রয়োজন হতে পারে।

  • ভেগান লাইফস্টাইল: নিরামিষ ভোজি জীবনধারা অনুসরণ কারীদের মধ্যে ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি১২ এর অভাব হলে।

  • শিশুদের পুষ্টি: শিশুদের শরীরে ভিটামিন এ, বি, সি এবং আয়রনসহ নানা মিনারেলের অভাব হলে।

  • বয়স্ক ব্যক্তির পুষ্টি: বয়স্কদের শরীরে বার্ধক্যজনিত কারণে ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব দেখা দিলে।

  • এন্টিবায়োটিক সেবন: যারা দীর্ঘদিন ধরে এন্টিবায়োটিক নিচ্ছেন, তাদের জন্য মাল্টিভিটামিন প্রয়োজন হলে।

সাপ্লিমেন্ট সবসময়  ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নেওয়া উচিত। 

ফুড সাপ্লিমেন্ট কেন প্রয়োজন

  • শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন।

  • জিএমও শস্যের পুষ্টি কম থাকে, যার ফলে ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি দেখা দেয়।

  • বয়স বাড়লে শরীরের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়, তাই সাপ্লিমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন।

  • কঠোর পরিশ্রমে শক্তি খরচ হয়, সেক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট শরীরের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি

সাপ্লিমেন্ট নিরাপদভাবে এবং সঠিকভাবে খাওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন। যদি আপনি কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছেন অথবা নতুনভাবে গ্রহণ করার চিন্তা করছেন, তাহলে নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন:

আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন: কোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং আপনার নেওয়া সাপ্লিমেন্ট এবং ওষুধ সম্পর্কে তাদের জানান।

লেবেলে নির্দেশনা অনুসরণ করুন: সাপ্লিমেন্টকে সঠিকভাবে, পণ্যের লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে ব্যবহার করুন।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করেন, তবে তা অবিলম্বে বন্ধ করে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।

গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যপানকালে সাপ্লিমেন্ট নেয়ার আগে পরামর্শ নিন: গর্ভবতী বা স্তন্যপান করানোর সময় অনেক সাপ্লিমেন্ট নিরাপদ নয়, তাই শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সার্জারির আগে সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে জানান: যদি আপনার কোনো সার্জারি করা হয়, তাহলে আপনার চিকিৎসককে জানাবেন যে আপনি কোন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করছেন, কারণ কিছু সাপ্লিমেন্ট অ্যানেসথেসিয়ার কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে এবং অপারেশন পরবর্তী অস্বাভাবিক রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ওষুধ আর খাবার সাপ্লিমেন্ট কি এক? 

ওষুধ রোগ সারাতে কাজ করে, আর সাপ্লিমেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখতে কাজ করে।

কিছু লোক মনে করে যে, সাপ্লিমেন্ট খেলেই সব রোগের চিকিৎসা করা যায়। এই ধারণা ভুল। সাপ্লিমেন্ট গুলো ওষুধ নয়, এগুলো শুধুমাত্র আমাদের খাদ্য তালিকার ঘাটতি পূরণ করে।


পরিশেষে, ফুড সাপ্লিমেন্ট আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, ডাক্তার বা নিউট্রিশনিস্টের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন এবং মিনারেলস এর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত নয়। যদি আমরা সুস্থ এবং সচল থাকি, তাহলে আমাদের খাবার থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো নেওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url