হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো জানুন ও সাবধানতা অবলম্বন করুন

মিনি স্ট্রোক এর লক্ষণ সম্পর্কে জানুনআপনি কি জানেন হিট স্ট্রোক কি? হিট স্ট্রোক কেন হয়? হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি? হিট স্ট্রাক হলে কিভাবে প্রতিকার করবেন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা জানাবো। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় হিট স্ট্রোকের সমস্যা। তাই সকলের জেনে রাখা উচিত হিট স্ট্রোক এর লক্ষণগুলো এবং প্রতিকার সম্পর্কে। তাই আসুন হিট স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।
হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ
হিট স্ট্রোক এমন একটি রোগ যা তার জনিত অবস্থার কারণে বেশি হয়ে থাকে। মানুষের শরীরে যখন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। এখন মানুষের শরীরে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। ঘামের প্রতিক্রিয়া শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যর্থ হয় তখন হিট স্ট্রোক সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মানুষের হিট স্ট্রোক হলে ১০ থেকে ২০ মিনিট এর মধ্যে শরীরের তাপমাত্রায় ১০৬ ডিগ্রি ফারেন হাইট ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়ে যায়। দ্রুত সময় চিকিৎসা পদক্ষেপ না নিলে হিট স্ট্রোক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মোটকথা হিট স্ট্রোক হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যা শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপের কারণে সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে সাধারণ উচ্চ তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করলে এছাড়া শারীরিক পরিশ্রম করলে হিট স্ট্রোক আশঙ্কা বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ গরমকালে হিট স্ট্রোকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

তাই দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে সঠিক চিকিৎসা না পড়লে, হিট স্ট্রোক এর ফলে মানুষের মস্তিষ্ক, কিডন, হৃদপিণ্ড এবং পেশির ক্ষতিসাজন হয়ে যায়। এছাড়া হিট স্ট্রোক চিকিৎসায় গাফিলতি করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোক কি?

হিট স্ট্রোক হচ্ছে এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া। হাইপার হলো অধিক মাত্রা। আর থার্মিয়া হলো তাপ। আর শরীরে বেশি পরিমাণে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বলা হয় হিট স্ট্রোক।

মানুষের শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক প্রিয়ার ফলে সব সময় উচ্চতা তাপ সৃষ্টি হয়। শরিলে ঘামের সাহায্যে সে তাপ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে একটানা গরম রোদে থাকলে ঘামের সাথে শরীরের অতিরিক্ত জল/ পানি বেরিয়ে আসে।
মানুষের শরীর হতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যাওয়া ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়। ঘামের সাথে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। যার জন্য শরীরকে করে তোলে পরিশ্রান্ত।

যার ফলে দেখা দেয় মাথা ঘোরা কিংবা অজ্ঞান হয়ে করার মত সমস্যা। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক যারা ওবেসিটি'তে ভুগছে তাদের হিট স্ট্রোক আক্রান্ত করে।

হিট স্ট্রোকের সময় কি কি ঘটে?

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় অত্যধিক এক্সপোজার তাপ ক্লান্তের কারণ হতে পারে যা তাপ ক্র্যাম্প ও হিট স্ট্রোক এর দিকে অগ্রসর করে তোলে। দীর্ঘ তাপের সংস্পর্শে ঢাকার ফলে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা হাইপারথারমিয়া সৃষ্টি করে তোলে।
হিট স্ট্রোক হচ্ছে তাপের আঘাতএর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রুপ, যা শরীরের তাপমাত্রা ৪০.৫০ সেলসিয়াস বেশি পৌছে। এছাড়া, মানসিক আচরণ এর সঙ্গে হাইপারথার্মিয়া, বমি ভাব, ঘাম, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন, মাথা ব্যথা হিট ন্ট্রোক এর কারল হতে পারে। 

আপনি যদি সন্দেহ করেন হিট স্ট্রোক হয়েছে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। হিট স্ট্রোকের অঙ্গ হলো ব্যর্থতা দুর্বলতাজৈব রাসায়নিক ফাংশন ও ডিহাইড্রেশন হতে পারে। হিট স্ট্রোক হলে বিশেষ ক্ষত্রে খিচুনি, অজ্ঞান ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোক এর ঝুকি কাদের জন্য বেশি

১। হিট স্ট্রোক এর ঝুমি ছোট্ট ছিল থেকে শুরু করে ৬৫ বছর বয়ষ্ক ব্যক্তিদের ঝুকি বেশি।
২। যে সকল মানুষ বিস্তৃত কার্যকলা-এ সংযুক্ত থাকে কিংবা বেশি সময় ধরে সূর্যের সংস্পর্শে থাকে তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বেশি।
৩। নির্দিষ্ট ফুসফুস ও হার্ট রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের ঝুকি বেশি থাকে।

হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ

গরম বৃদ্ধি পেলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়ে যায়। হিট স্ট্রোক এর কিছু লক্ষণ রয়েছে যা অনেকেই এখনো জানেনা। তাই তাদের সুবিধার্থে হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো কি সে বিষয়ে জেনে নেয়া উচিত। বিশেষ করে আপনার যদি হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো জানতে পারেন তাহলে সচেতন থাকতে পারবেন। তাই চলুন হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ সম্পর্কে জেনে আসি।

তীব্র/ প্রচন্ড মাথা ব্যাথাঃ অতিরিক্ত গরমের জন্য মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া গরমে মাইগ্রেন ট্রিগার হতে পারে। হিট স্ট্রোক এর একটি প্রথম লক্ষণ।

প্রচন্ড পরিমাণে পানি শূন্যতা এবং ঘামঃ হিট স্ট্রোক এর পূর্বে মানুষের ব্যাপক তৃষ্ণা অনুভব হতে পারে। সেইসঙ্গে ডিহাইড্রেটেড অনুভব হতে পারে। মানুষের শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।

দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়ঃ হিট স্ট্রোক এর পূর্বে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক এর থেকে দ্রুত মাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। আর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেলে হার্ট স্ট্রোক এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

হাইপার ভেন্টিলেশন হয়ঃ মানুষের শ্বাসকষ্ট দ্রুত এবং ভারী শ্বাস-প্রশ্বাস হিট স্ট্রোক এর কারণ।

বমি ভাব হওয়াঃ মাথাব্যথা থেকে শুরু করে দ্রুত হৃদস্পন্দন এবং হাইপার ভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাবে আরো ইত্যাদি কারণে হিট স্ট্রোক এর আগে বমি ভাব দেখা দিতে পারে।

বিরক্তি এবং বিভ্রান্তি হওয়াঃ অতিরিক্ত উচ্চতাপের ফলে হিট স্ট্রোক এর পূর্বে মানুষ বিরক্ত বোধ করতে পারে, অতিরিক্ত রাগান্বিত হতে পারে, অযৌক্তিক কথাবার্তা বলতে পারে এমনকি গালাগালিও করতে পারে। এটিও মূলত হিট স্ট্রোক এর একটি কারণ।

ঝগড়া ও বিবাদে জড়িয়ে যাওয়াঃ হিট স্ট্রোক এর আরো একটি বড় লক্ষণ হল ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে যাওয়া।

মাংস পেশিতে ব্যথাঃ হিট স্ট্রোক এর পূর্বে যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে আরও একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো মাংসপেশি ব্যথা। এই ব্যথাগুলো মানুষ সাধারন ব্যথা ভেবে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না।

অজ্ঞান হয়ে যাওয়াঃ অতিরিক্ত উত্তাপে মানুষের শরীর স্বাভাবিক এর তুলনায় সব থেকে বেশি কাজ করে থাকে। যার ফলে শরীরে ক্লান্তি এবং দূর্বলতা সৃষ্টি হয়। আর এই জন্য মানুষ অজ্ঞান পর্যন্ত হয়ে পড়ে, আর এই ধরনের সমস্যা কেউ মূলত হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।

শরীরে ঘাম না হওয়াঃ হিট স্ট্রোক এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হচ্ছে প্রচন্ড গরমেও ঘাম না হওয়া। এক্ষেত্রে মনে হয় শরীরে ঘাম হওয়ার মতো পানি নেই, শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রতিক্রিয়া কাজ করে না।

তো আপনারা উপরোক্ত আলোচনায় জানতে পারলেন হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। বিশেষ করে আমরা গরমের সময়ে বাড়ির বাইরে কমবেশি সবাই গমন করে থাকি। কিন্তু হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে অবশ্যই সকলকে সচেতন থেকে ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া প্রচন্ড গরমের সময় কৃত্তিম চেনিম যুক্ত পানীয় থেকে বিরত থাকতে হবে।

কিভাবে হিট স্ট্রোক এর বিরুদ্ধে লড়াই বা প্রতিরোধ করবেন?

আপনারা উপরোক্ত আলোচনায় হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে দ্রুত নিচে দেওয়া পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করবেন। যেমন-
  • হিট স্টক রোগীদের একটি ছায়াময় এবং শীতল জায়গায় রাখতে হবে বিশেষ করে বাড়ির ভিতর।
  • ক্লাস্ট্রো ফোবিয়া ও বিভ্রান্তি বিপরীত করতে হইলে কোন অতিরিক্ত পোশাক রাখা যাবে না, সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • হিট স্ট্রোক রোগের আশেপাশে মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। সার্বক্ষণিক একজন সুস্থ ব্যক্তিকে হিট স্ট্রোক রোগীর সঙ্গে থাকতে হবে।
  • হিট স্ট্রোক রোগের মাথাব্যথা বা মাথা গরম হয়ে গেলে দ্রুত ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে পুরো শরীর পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য গ্রীষ্মকালীন টিপস

আপনি যদি হিট স্ট্রোক রোগ প্রতিরোধ করতে চান তাহলে নিচে দেওয়া গ্রীষ্মকালীন টিপস গুলো অনুসরণ করুন। যার ফলে আপনারা হিট স্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
১। হিট স্ট্রোক থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে ঢিলাঢালা হালকা পোশাক পরিধান করুন।
২। ঠান্ডা ও তরল খাবার খান।
৩। অ্যালকোহল আপনাকে দ্রুত ডিহাইডেট করতে পারে, এগুলো হারিয়ে চলুন।
৪। তরমুজ শসা ডালিম ও কলা খান।
৫। নিয়মিত ব্যায়াম এবং সাঁতার কাটতে যুক্ত হন।
৬। বাইরে কোন জায়গায় অবস্থান করলে ছায়ায় নিয়মিত বিশ্রাম করুন আর কিছুক্ষণ পরপর তরল খাবার খান।
৭। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে, গাড়িতে অবস্থানরত ৫ থেকে ১০ মিনিট এর বেশি সময় ধরে বাচ্চাকে অযত্নে রাখবেন না।

শেষ কথাঃ হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ

আমরা আজকের এই পোস্টে জানিয়ে দিলাম হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি? হিট স্ট্রোক হলে কিভাবে প্রতিকার করবেন? হিট স্ট্রোক কেন হয় এ বিষয়ে বিস্তারিত।

আপনি যদি নিজেকে হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে চান? তাহলে উপরে বলা লক্ষণ গুলোর মধ্যে আপনার সাথে কি কি ঘটছে, এ বিষয় গুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url