ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট সম্পর্কে জানুন

ফাওমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় জেনে নিনআপনি কি ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট তৈরি নিয়ে অনেক বেশি চিন্তিত? যদি তাই হয় তাহলে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আমাদের লিখা ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।  ব্রয়লার মুরগি এমন এক ধরনের মুরগি যার রহস্য বিশ্বের কেবল চারটি দেশেই জানে এবং এই চারটি দেশে সকল জাতের ব্রয়লার মুরগির ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।ব্রয়লার মুরগিগুলো আর যে সকল মুরগি রয়েছে সেগুলোর মতোই। কিন্তু এই ধরনের ব্রয়লার মুরগিগুলো অন্যান্য মুরগির তুলনায় অনেক বেশি উৎপাদনশীল হয়ে থাকে। তো আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা নির্বাচন করবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে বিশেষ কিছু দিক লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করব ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট, ব্যবসার জন্য ব্রয়লার মুরগি কিভাবে নির্বাচন করতে হবে এবং ব্রয়লার মুরগী থেকে কিভাবে ভালো পরিমাণের লাভ করা যাবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তো চলুন বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক।

ব্যবসার জন্য ব্রয়লার মুরগির নির্বাচন প্রক্রিয়া

আপনার যারা ব্যবসার জন্য ব্রয়লার মুরগী নির্বাচন করতে চান, তাদেরকে নিচে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তাহলেই আপনারা সঠিকভাবে ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। যেমন-
০১। ব্রয়লার একদিন এর বাচ্চার ওজন হবে ৩৬ থেকে ৪০ গ্রাম পর্যন্ত। ব্রয়লার মুরগির ব্যবসার ক্ষেত্রে একদিনের বাচ্চার দেহের ওজন যদি ভালো পরিমাণের হয়। তাহলে বিক্রির সময় ব্রয়লার মুরগির ওজন আরো ভালো বৃদ্ধি হবে।
০২। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা বংশগতি ধারার মুরগির বাচ্চা যদি না হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায় খুব একটা লাভ হবে না। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় একদল ব্রয়লার মুরগি অন্যদলের চেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়। তাই ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা পরিচালনা করতে গেলে অবশ্যই বংশগতি ধারা দেখে মুরগির বাচ্চা উত্তোলন করতে হবে।
০৩। ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন হয় উচ্চ পর্যায়ের আমিষ ও শক্তি বা বেশি তাপ দিতে পারে এমন খাবার গুলো। শূন্য থেকে ছয় সপ্তাহের ব্রয়লার বাচ্চার খাবার তালিকায় থাকতে হবে প্রতি কেজি খাবারের আমিষ থাকতে হবে 22.24%, এক্ষেত্রে বিপাকীয় তাপ ২৯০০ থেকে ৩০০০ কিলোক্যালরি।
০৪। ব্রয়লার মুরগির খাবারে মোটা আঁশের শতকরা হার ৬ এর বেশি দেওয়া যাবে না।
০৫। ব্রয়লার মুরগির জন্য ভিটামিন এ, বি২, বি১২ এবং কে ভীষণ দরকারি।
০৬। ব্রয়লার মুরগিকে পটাশিয়াম, আয়োডিন, ম্যাঙ্গানিজ, সালফেট সহ জিং কার্বনেট পৃথকভাবে ভালোভাবে মিশিয়ে মুরগিকে খাওয়াতে হবে, এতে করে ব্রয়লার মুরগী দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত পয়েন্ট গুলো অনুসরণ করেন। তাহলে ব্যবসার জন্য ব্রয়লার মুরগি নির্বাচন করে ব্যবসাটি পরিচালনা করা শুরু করতে পারবেন।

ব্রয়লার মুরগির ওষুধের তালিকা

ব্রয়লার মুরগী লালন পালন করতে চাইলে, অবশ্যই ব্রয়লার মুরগির ওষুধের তালিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আমি এখন আপনাদের সুবিধার্থে ব্রয়লার মুরগির ওষুধের তালিকা জানিয়ে দিচ্ছি, যা আপনারা ব্রয়লার মুরগি ১ দিন থেকে ৩২ দিন পর্যন্ত কি ধরনের ঔষধ দিতে হবে সে বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন।
  • ১ম দিন - গ্লুকোজ এবং ভিটামিন সি।
  • ২য় দিন থেকে ৪র্থ দিন - অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেনামাইসিন পাউডার, ব্যাকটিট্যাব পাউডার।
  • ৫ম দিন - রানীক্ষেত হলে ভ্যাকসিন এন্টিস্ট্রেসর।
  • ৬ষ্ঠ দিন - ওয়াটার এসিডিফায়ার।
  • ৭-ম থেকে ৮ম দিন - ভিটামিন বি১।
  • ৯ম দিন - সাদা পানি।
  • ১০ম থেকে ১১ তম দিন - গামবোরো ভ্যাকসিন।
  • ১২ তম দিন - ক্যালসিয়াম।
  • ১৩ তম দিন - সাদা পানি।
  • ১৪-১৬ তম দিন - এন্টিকক্সিডিয়াল।
  • ১৭-১৮ তম দিন - গামবোরো ভ্যাকসিন।
  • ১৯ তম দিন - সাদা পানি।
  • ২০-২২ তম দিন - গ্রোথ প্রোমোটার, লিকুইড এনজাইম।
  • ২৩-২৪ তম দিন - রাণিক্ষেত ভ্যাকসিন এন্টিস্ট্রেসর।
  • ২৫ তম দিন - সাদা পানি।
  • ২৬-২৮ তম দিন - ক্যালসিয়াম, ভিটামিন।
  • ২৯ তম দিন - সাদা পানি।
  • ৩০-৩২ তম দিন - গ্রোথ প্রোমোটার ও ওয়াটার এসিডিফার।

ব্রয়লার মুরগি থেকে ভালো পরিমাণে লাভ করতে চাইলে খামারিদের যা করা প্রয়োজন

আপনি যদি একজন প্রকৃত খামারি হতে চান। তাহলে ব্রয়লার মুরগী থেকে কিভাবে ভালো পরিমাণের টাকা ইনকাম করা যাবে সে বিষয়ে আপনাকে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
আমি আপনাদের সুবিধার্থে এখানে ব্রয়লার মুরগী থেকে ভালো পরিমানের লাভ করতে চাইলে খামারিদের যা করা প্রয়োজন সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাই নিচে দেয়া তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে অনুসরণ করুন।

একটি খামারবাড়ি স্থাপন করুন

ব্রয়লার মুরগী নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই একটি খামার বাড়ি স্থাপন করতে হবে। তারপর যে খাবারে মুরগি আসবে আগে থেকেই সেই খামার ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। বিশেষ করে ব্লো ল্যাম্প দিয়ে ফাক-ফোকর গুলোতে থাকা পোকা-মাকড় মারতে হবে। 

ব্রয়লার মুরগির জায়গা গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রয়লার মুরগী আসার ৪৮ ঘণ্টা পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। আর সব সময় খেয়াল রাখবেন খামার ঘর যাতে করে তাপমাত্রা ৩৫০ সেঃ হয়।

খাবার ও পানির জায়গা স্থাপন করুন

ব্রয়লার মুরগীকে প্রথমদিন খাবার দেওয়ার জন্য ডিম নেওয়ার কার্টনে খাবার দেওয়া হলেও চলবে। এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে প্রায় এক সপ্তাহ জুড়ে। যখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে যাবে তারপর খাবারের জায়গা আধা-আধি ভর্তি করতে হবে। এরকম ভাবে খাবার দেওয়ার মাধ্যমে খাবর নস্ট কম হবে।
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চাদের পরিষ্কার ঠান্ডা পানি ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পানির জায়গায় বেশি সংখ্যা রাখতে হবে। আর মনে রাখতে হবে বাচ্চা ডিম পাড়া মুরগি থেকে ব্রয়লার বাচ্চা বেশি পানি পান করে থাকে। গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে গরম প্রবাহ চলাকালীন সময়ে মুরগি প্রচুর পরিমাণে পানি খেয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে থাকে।

শীতকালীন ব্রয়লার পরিচালনা ব্যবস্থা

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার বিছানা ৫”-৬” গভীর হতে হবে। বাচ্চার বিছানা জলীয়ভাব বেশি থাকলে চুন দিতে হবে। চুন অ্যামোনিয়া গ্যাস শুষে নেয়।

ব্রয়লার মুরগির বাজার দর

ব্রয়লার মুরগি সারা পৃথিবী জুড়ে একটাই সমস্যা দেখা দেয়। যা একশ, দুইশ, তিনশো, 500 বা তার বেশি শৃংখল বা চেইন নিয়মে বিক্রি করা হয় বলে বাজার আগে থেকে তৈরি করে নিতে হয়।

আপনার ব্রয়লার মুরগির খামার যদি ঘনবসতি সম্পন্ন হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ৫০ থেকে ১০০ টি মুরগি দুই দিনে বিক্রি করতে পারবেন। যেখানে সুনিশ্চিত বাজার রয়েছে সেখানে ৩০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম এবং কেজি হিসেবেও বিক্রি করতে পারবেন।

ব্রয়লার মুরগির ওজন না আসার কারণ

  • আক্রান্ত ঝাকে এর ১৫% থেকে ৪০% ব্রয়লার মুরগির আশানুরুপ দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পায় না।
  • আক্রান্ত ব্রয়লার মুরগির পালক গুলো উসকো খুশকু হয়। মুরগির চলাফেরা অনীহা ও আক্রান্ত মুরগির আমযুক্ত বিষ্ঠা নির্গত হয়।
  • প্রথম সপ্তাহের পরে পেট ফোলা ভাব হয় ও পালক ঠিকভাবে গজায় না।
  • অস্টিওডিসট্রোপি, অ্যানসেফালো ম্যালেশিয়া হলে, মুরগি ঘুর-পাক খায় ওবং ঘাড় বাকা হয়।
উক্ত বিষয়গুলো হলো ব্রয়লার মুরগির ওজন না আসার কারণ সমূহ।

ব্রয়লার মুরগির ব্যবসার সর্তকতা

আপনি যদি ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা পরিচালনা করতে চান। তাহলে নিচে দেওয়া সতর্কতা গুলো অনুসরণ করে কাজ করতে হবে। যেমন-
  • উৎপাদনের ৬০% থেকে ৬৫% টাকা খাবারের পেছনে ব্যয় করতে হবে।
  • ব্রয়লার মুরগিকে সুষম খাদ্য অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় জিনিস খাওয়ালে অতিরিক্ত দাম পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে গরম আবহাওয়া বা প্রবাহে আপনাকে অতিরিক্ত চর্বি বা তেল দিতে হবে।
  • ব্রয়লার মুরগির সুষম খাবারের ৬৪% আমিষ দেহের কাজে লাগাই। ব্রয়লার মুরগির প্রয়োজনীয় আমিষ তিন ভাগে ভাগ করা যায় যেমন - ১. কলা বৃদ্ধির জন্য, ২. দেহের ক্ষয় রোধের জন্য, ৩. পালক গঠনের জন্য।
গরম সিজনে ব্রয়লার সুষম খাদ্য বেশি পরিমাণের আমিষ প্রয়োজন হয় শীতকালের তুলনায়।

ব্রয়লার মুরগীর ওজন বৃদ্ধির চার্ট

ব্রয়লার মুরগির দৈহিক ওজন বৃদ্ধিতে খামারিদের করণীয় যেসব কাজ রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট এ জানিয়ে দেবো।

আপনারা ভালোভাবে জেনে শুনে খামার শুরু করতে চাইলে অবশ্যই এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করবেন। আমরা জানি ব্রয়লার খামার গুলো আমাদের বাংলাদেশের মাংসের চাহিদা পূরণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন।

তাই চলুন আর সময় নস্ট না করে, ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট সম্পর্কে জেনে আসি।

ব্রয়লার মুরগীর ওজন বৃদ্ধির চার্ট

১।

ব্রয়লার মুরগির খামারের বাচ্চা আসার পূর্বে থেকে শুরু করে নিয়মিত খাবার পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে। যার ফলে খামারে রোগের প্রকোপ কম হবে এবং ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধি পাবে।

২।

যেখানে ব্রয়লার মুরগী লালন পালন করা হবে, সেখানে যেন সব সময় আলো-বাতাস এর চলাচল এর সু ব্যবস্থা থাকে। এই ব্যবস্থা না থাকলে খামারের মুরগি রোগ আক্রান্ত হবে। তাই মুরগির দৈহিক গঠন ভালো রাখতে আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৩।

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা গুলো কে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে হবে। কোন ভাবেই দুর্বল এবং রোগী বাচ্চা খামারে রাখা যাবে না।

৪।

ব্রুডিং-এ তাপ-মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই সাথে দুই ব্যাচ এর মধ্যে ১৫ দিন বিরতি রাখতে হবে। ব্রুডিংয়ের সময় তাপ মাত্রা যেন কম বা বেশি না হয়, সেটার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫।

ব্রয়লার খামার এর লিটার সব সময় শুকনো অবস্থায় রাখতে হবে। তার জন্য নিয়মিত মুরগির লিটার পর্যবেক্ষণ করতে হইবে। দরকার হলে লিটার পরিবর্তন করে নতুন লিটার এর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬।

ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা গুলোকে যথা সময়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে। যেকোন ওষধ ব্যবহারের সময়ে সেই ওষধের মেয়াদ আছে কিনা দেখতে হবে। সব সময় চিকিৎসা এর পরামর্শ নিয়ে ভ্যাকসিন দিবেন।

শেষ কথাঃ ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট

আমরা আজকের এই আর্টিকেলে জানিয়ে দিলাম ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট সহ আরো বিভিন্ন তথ্যাদি সম্পর্কে। এখন আপনি যদি ব্রয়লার মুরগির খামারি হতে চান, তাহলে উক্ত আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

আর সব শেষে আপনার যদি এই কনটেন্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে বা জানার থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url