থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে জানুন ও সতর্ক হন

হেপাটাইসিস বি পজেটিভ হলে করণীয় জানুনআপনি কি থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? যদি এমনটা হয় তাহলে থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে আর্টিকেলটি পড়ুন। থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে আর্টিকেলে আপনাদের সুবিধার জন্য বিস্তারিতভাবে থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা ও একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে
আশা করছি আপনারা থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে আর্টিকেলটি পড়ে থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। এই আর্টিকেলে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়েছে।

থ্যালাসেমিয়া রোগ কেন হয়

আপনারা অনেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগের নাম প্রথমবার শুনছেন। আবার অনেকেই রয়েছেন এই রোগে আক্রান্ত। থ্যালাসেমিয়া আসলেই কি। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে এক ধরনের রক্তের রোগ। রোগী এ রোগে আক্রান্ত হলে তার শরীরে বাহিত রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী যে সকল হিমোগ্লোবিন কণা রয়েছে তা উৎপাদনে ত্রুটি সৃষ্টি করে। 

আর সেই কারণে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তে অক্সিজেনের অভাবে ভুগে থাকেন। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে এক ধরনের জিন ঘটিত রোগ। থ্যালাসেমিয়া প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত আলফা থ্যালাসেমিয়া এবং দ্বিতীয় বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়াকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর। এছাড়াও বিটা থ্যালাসেমিয়া কেউ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজর ও বিটা থ্যালাসেমিয়া মাইনর। আলফা থ্যালাসেমিয়া এবং বিটা থ্যালাসেমিয়া এই দুটির মধ্যে বিটা থ্যালাসেমিয়া কে বেশি ভয়ংকর বলা হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যদি আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার তীব্রতা মৃদু হয়ে থাকে। 

আর যদি কোন ব্যক্তি বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে তার তীব্রতা হয় বেশি। থ্যালাসেমিয়া রোগ ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে যদি কোন মা বাবা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত থাকে তাহলে তার শিশুটি ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। আর থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ কোন ব্যক্তির ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন জিন। আর এই রোগ বংশানুক্রমে ছড়াই।

থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কে

আপনি কি জানেন থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কে। আপনি হয়তো ভাবছেন এই রোগ ছড়িয়েছে বাইরে থেকে কোনরকম রোগ জীবাণু দ্বারা। যদি আপনার ধারণাও এমনটা হয় তাহলে এটি আপনার ভুল ধারণা। থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হচ্ছে মাতা এবং পিতা। মাতা পিতা দ্বারাই থ্যালাসেমিয়া রোগ সন্তানের মাঝে ছড়িয়ে থাকে। 

মাতা পিতা যদি এই রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার সন্তানের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যখন একজন মা এবং বাবা উভয়ের থ্যালাসেমিয়া জিন রয়েছে তখন তার সন্তানের ২৫% থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সুতরাং বলা যায় যে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হচ্ছে মাতা এবং পিতা। যেহেতু থ্যালাসেমিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে সেহেতু জেনে নিন এ দুটি রোগ কিভাবে ছড়ায়।

আলফা থ্যালাসেমিয়াঃ আলফা থ্যালাসেমিয়া চারটি জিন দিয়ে শৃঙ্খল তৈরি করে। যখন কোন ব্যক্তি চারটি জিনের মধ্যে একটি অথবা তার থেকে বেশি জিনের ত্রুটিপূর্ণ ঘটে তখন আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। একজন ব্যক্তির যত বেশি জিন ত্রুটিপূর্ণ দেখা দিবে তার জন্য তত বেশি সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করবে। 

যদি কোন ব্যক্তির একটি জিনের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ দেখা দেয় তাহলে সেই ব্যক্তির কোনো রকম লক্ষণ প্রকাশ পাবে না। আর যদি একটি বেশী দুইটি জিনের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ দেখা দেয় তাহলে তার মাঝে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আর এই অল্প কিছু লক্ষণ প্রকাশকেই আলফা থ্যালাসেমিয়া বলা হয়ে থাকে।

বিটা থ্যালাসেমিয়াঃ বিটা থ্যালাসেমিয়া শৃংখল গঠন তৈরি করে দুইটি জিন দ্বারা। আর কোন ব্যক্তি যখন মা বাবা হতে প্রাপ্ত চারটি জিনের মধ্যে একটি জিনের ত্রুটিপূর্ণ দেখা দেয় তখন তার মাঝে কোন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায় না। 

আর যখন একটি বেশী দুইটি জিনের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ দেখা দেবে তখন প্রকাশ পাবে কিছু লক্ষণ। আর একেই বলা হয়ে থাকে বিটা থ্যালাসেমিয়া। আলফা থ্যালাসেমিয়ার থেকে বিটা থ্যালাসেমিয়াকে বেশি ভয়ংকর বলা হয়েছে।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ে

থ্যালাসেমিয়া এই রোগটি কোনরকম ছোঁয়াচে রোগ নয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী যদি অন্য কোন ব্যক্তিকে রক্ত দান করে তাহলে সে ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবেন না। কিংবা কোন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন মিলন করলেও অপর ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবেন না। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে একটি বংশগত রক্তের রোগ অথবা জিন বাহিত রোগ। 

বিভিন্ন চিকিৎসকগণ বিয়ের পূর্বে রক্তে থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কিনা সেটি পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত দুইজন ব্যক্তিকে চিকিৎসকনেরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে নিষেধ করেন। কারণ মা এবং বাবা দুজনই যদি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত থাকেন তাহলে তাদের শিশুর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। 

যদি পিতা-মাতা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন তাহলে গর্ভধারণ করার পর অবশ্যই আট থেকে বারো সপ্তাহের ভেতর ভ্রুনের পরীক্ষা করতে হবে। থ্যালাসেমিয়ায় যদি কোন শিশু আক্রান্ত হয় তাহলে সেই শিশুটিকে রক্তদান করেও বাঁচানো সম্ভব হয়। 

কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর সেই শিশুটিকে রক্ত প্রদান করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে যদি রক্ত প্রদান না করা হয় তাহলে সেই শিশুর বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। তাই অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া রোগীর বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তারপর সেই পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

থ্যালাসেমিয়া রোগী কতদিন বাঁচে

বর্তমানে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। থ্যালাসেমিয়া স্বল্প উন্নত দেশগুলোর মধ্যে বেশি লক্ষণীয় যেমন নেপাল,পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন ৫০ বছর পর থ্যালাসেমিয়া একটি বড় আকার ধারণ করবে। 

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সেই কারণে বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। থ্যালাসেমিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে একই বংশের ভাই বোনের সাথে বিবাহ বন্ধন। এই কারণে দুইজন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত থাকলে তখন তার শিশুটিও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। 

একজন থ্যালাসেমিয়া রোগী সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ বছর বেঁচে থাকে। কিন্তু এই বেঁচে থাকা কালীন বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে বারবার অন্যের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। যা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠেন না। এছাড়াও বারবার রক্ত গ্রহণের কারণেও দেখা দেয় বিভিন্ন রকম সমস্যা।

থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা

একজন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীকে তার খাদ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সবসময় যে কোন খাবার খেলে চলবে না। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবলম্বন করতে হবে বিভিন্ন রকম সতর্কতা। 

বুঝে শুনে সতর্কভাবে খাবার খেলেই শারীরিকভাবে থাকবেন সুস্থ। যে সকল খাবারে লৌহ এর পরিমাণ কম থাকে থ্যালাসেমিয়া রোগীকে সবসময় সেই সকল খাবার খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাবার তালিকা আলোচনা করা হলোঃ
যে সকল ফল খেতে পারবেন তা হলঃ
  • পেয়ারা
  • আম
  • পাকা পেঁপে
  • কলা
  • জামরুল
  • লেবু
  • কমলালেবু
  • বেল
  • লিচু
  • আমলকি
 যে সকল ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ
  • বেদানা
  • খেজুর
  • আনারস
  • তরমুজ
  • শরিফা
যে সকল শাকসবজি খেতে পারবেনঃ
  • টমেটো
  • লাউ
  • শালগম
  • ঝিঙ্গা
  • মিষ্টি আলু
  • চাল কুমড়া
  • মিষ্টি কুমড়া
  • বাঁধাকপি
  • ঢেঁড়স
যে সকল শাকসবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ
  • বরবটি
  • কাকরোল
  • সাজনা
  • ধনেপাতা
  • পুই শাক
  • কচুশাক
  • মটরশুঁটি
  • পালং শাক
  • পুদিনা পাতা
  • ফুলকপি
  • কাঁচা পেঁপে
যে সকল মাছ খেতে পারবেনঃ
  • রুই মাছ
  • বোয়াল মাছ
  • পাঙ্গাস মাছ
  • রুই মাছ
  • কাতল মাছ
যে সকল মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ
  • ইলিশ মাছ
  • চিংড়ি মাছ
  • ট্যাংরা মাছ
  • মাছের শুটকি
  • চিতল মাছ
  • কৈ মাছ
এছাড়াও অন্যান্য যে সকল খাবার খেতে পারবেনঃ
  • ময়দা
  • পাউরুটি
  • মসুর ডাল
  • দুধ
  • মধু
  • দুগ্ধ জাত খাবার
অন্যান্য যে সকল খাবার খেতে সতর্কতা অবলম্বন করবেনঃ
  • কিসমিস
  • চিনা বাদাম
  • বাদাম
  • ছোলা
  • কর্নফ্লেক্স
  • গরুর মাংস
  • খাসির মাংস
  • কলিজা
  • ডিমের কুসুম

থ্যালাসেমিয়া কি ব্লাড ক্যান্সার

থ্যালাসেমিয়া যেহেতু এক ধরনের রক্তের রোগ তাই অনেকেই মনে করেন থ্যালাসেমিয়া মানেই ব্লাড ক্যান্সার। কিন্তু আসলেই থ্যালাসেমিয়া কি ব্লাড ক্যান্সার। থ্যালাসেমিয়া ব্লাড ক্যান্সার নয়। থ্যালাসেমিয়া আর ব্লাড ক্যান্সার সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি রোগ। 

ব্লাড ক্যান্সার হচ্ছে রক্ত গঠনকারী কোষের ক্যান্সার। আর থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে রক্তের স্বল্পতা। দুটি রোগ ভিন্ন ভিন্ন এবং দুইটি রোগের চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন। তাই থ্যালাসেমিয়া আর ব্লাড ক্যান্সার এই দুটিকে একই রোগ মনে করা যাবে না। ব্লাড ক্যান্সার যে কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে হতে পারে। আর থ্যালাসেমিয়া জিনগত কারণে হয়ে থাকে।

থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয়

থ্যালাসেমিয়া এমন এক ধরনের একটি রোগ যেই রোগ একেবারেই ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একেবারেই সুস্থ হয় না। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে থ্যালাসেমিয়া কি ভালো হয় না। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির একটি প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে নিয়মিত রক্ত দান করা। একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কে রক্তদান করতে হয়। 

কিন্তু এভাবে রক্তদান কোন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নয়। বরং দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত গ্রহণ করলে শারীরিকভাবে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত রোগবিশেষজ্ঞ ডা. মুনিম আহমেদ বলেছেন যে থ্যালাসেমিয়া রোগের সব থেকে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন। আর এটি শুধুমাত্র ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের ভেতর করলে ভালো ফলাফল পাবে। 

আর এই আর এই অস্থিমজ্জা তখনই করা সম্ভব যখন রোগের শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি পরিমাণে থাকবে। শিশুর শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকলে আস্তে আস্তে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ছাড়া এই রোগের অন্য কোন উন্নত চিকিৎসা নেই। এই চিকিৎসা একটু ব্যয়বহুল ঠিকই কিন্তু ফলাফল পাওয়ার অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ কোন বয়সে প্রকাশ পায়

এটি হচ্ছে বংশগত রোগ হওয়ায় শিশু মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মা-বাবার উচিত গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। যখন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত মায়ের গর্ভ থেকে শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন তার থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায়। 

শিশুর জন্মের পর তার বয়স যখন দুই বছর হয় তার মধ্যেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করে। ধীরে ধীরে সময় যত যায় এ রোগের লক্ষণ তত বেশি প্রকাশ পায়। এ রোগে আক্রান্ত রোগী সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কোন শিশু যখন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তখন তার ভেতর কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। সময়ের সাথে সাথে শিশুটি যখন বড় হয় লক্ষণের তীব্রতা আরও বেশি বেড়ে যায়। এখন জেনে নিন থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার কি।
রোগের লক্ষণঃ
  • হৃদপিন্ডের সমস্যা
  • বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঘাটতি
  • দুর্বলতা
  • অতিরিক্ত আয়রন
  • অবসাদ
  • শ্বাসকষ্ট
  • প্লীহা বড় হওয়া
  • অস্বস্তি
  • গায়ের রং ফ্যাকাসে অথবা হলুদ হয়ে যাওয়া
  • পেটের আকৃতি বড় হওয়া
  • প্রসাবের রং গাঢ় হওয়া
  • সংক্রমণ
রোগের প্রতিকারঃ
এ রোগের প্রতিকার হচ্ছে যখন কোন শিশু এ রোগে আক্রান্ত হবে তখন তাকে নিয়মিত রক্ত প্রদান করতে হবে। এছাড়াও এখন উন্নত পদ্ধতি হচ্ছে অস্থিমজা প্রতিস্থাপন। এ দুটি পদ্ধতিতে থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসা করানো সম্ভব। এই রোগের প্রতিকার একটু কঠিন হলেও এই রোগের প্রতিরোধ খুবই সহজ। ইচ্ছা করলে এই রোগ প্রতিরোধ যোগ্য। 

এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে বিবাহের পূর্বে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করে নেওয়া। পুরুষ এবং মহিলা দুজন এর মধ্যে যদি একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং অপরজন এর থ্যালাসেমিয়া না থাকে তাহলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। 

পুরুষ এবং মহিলা যদি দুজনেই থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে সন্তানের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই অবশ্যই উচিত হবে পুরুষ এবং মহিলা দুজনেরই থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা। যদি দুজনেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভ ভ্রুণ পরীক্ষা করে যদি শিশুটি থ্যালাসেমিক শিশুতে সনাক্ত হয় তাহলে গর্ভপাত করাতে পারেন। 

এজন্য এখন আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। যে সকল পরীক্ষা আপনারা গর্ভাবস্থায় করে খুব সহজে বুঝতে পারবেন শিশুটি থ্যালাসেমিক শিশু কি না। পরীক্ষা গুলো হচ্ছেঃ
  1. অ্যামনিওসেনটিসিস
  2. ফিটারব্লাড স্যাম্পলিং
  3. কোরিওনিক ভিলিয়াস স্যাম্পলিং
আপনার শিশুটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কিনা জানার জন্য উপরোক্ত পরীক্ষাগুলো করাতে পারেন। উপরোক্ত পরীক্ষাগুলো করানোর মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখকের মন্তব্য

আশা করছি আপনারা থ্যালাসেমিয়া রোগী কত দিন বাঁচে আর্টিকেলটি পড়ে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তাই আমাদেরকে এই রোগের প্রকোপ কমাতে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। আমরা যদি এখন সচেতন না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকারক হবে। তাই সচেতন হন এবং থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url