বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনি কি বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছেন? মনে মনে বন্ধুত্ব থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন। যদি এমনটা হয় তাহলে নিশ্চিন্তে আমার লেখা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় এই আর্টিকেলটি পড়ুন।বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় এই আর্টিকেলে আমি বিস্তারিতভাবে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় ও বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে
আপনার বন্ধ্যাত্বের সমস্যার সমাধান খোঁজার জন্য বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করছি উপকৃত হবেন।

বন্ধ্যাত্ব কাকে বলে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বন্ধ্যাত্ব এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যখন কোন নারী সন্তান ধারণের চেষ্টা করে আর সেই চেষ্টা টানা এক বছর করার পরও যদি সফল না হয় তাহলে তাকে সন্তান ধারণের অক্ষম হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। গড়ে ১০০ জন দম্পতির ভেতর ৮ জন দম্পতি বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়ে থাকে। একজন নারীর সাধারণত ৪৫ বছর পর্যন্ত প্রজনন ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে। 
কিন্তু ৪৫ বছর বলা হলেও ৩৫ বছর পর একজন নারীর প্রজনন ক্ষমতা কমতে শুরু করে। একজন নারী যখন টানা দুই বছর বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হয় তখন সেই নারীকে বন্ধ্যাত্ব হিসাবে ধরা হয়ে থাকে।বন্ধ্যাত্ব শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রেই হয় তা কিন্তু নয়। অনেক সময় পুরুষের ক্ষেত্রেও এটি দেখা যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে বন্ধ্যাত্ব এর ক্ষেত্রে ৪০% মহিলা দায়ী আর ৪০% পুরুষ দায়ী থাকে। 

আর ২০% নারী এবং পুরুষ দুজনের সমস্যা থাকে। সবশেষে বলা যায় যে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করার পরেও যদি বাচ্চা না হয় তাহলে তাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। এই বন্ধ্যাত্ব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মহিলাদের শরীরে ভিটামিনের অভাবেও বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। তাই আপনাকে জানতে হবে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এবং সেই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করতে হবে। তা ছাড়াও বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।

বন্ধ্যাত্ব কেন হয়

একজন মহিলার বিভিন্ন রকম সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে। এই সমস্যা শুধুমাত্র নারীদের ক্ষেত্রে হয় তা কিন্তু নয়। এই সমস্যা ঠিক যতটা নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঠিক ততটুকুই পুরুষদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। 
গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজন হয় একটি সুস্থ ডিম অথবা ডিম্বাশয় এবং সবল বীর্য তাছাড়াও নরমাল পেলভিক এনাটমি। এই সকল জায়গার কোনো একটিতে সমস্যা থাকলে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। প্রাথমিকভাবে বন্ধ্যাত্বকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যাই। যথা-
  • এলুভলেশন যাকে সহজ ভাষায় বলা হয় ডিম্বাশয় থেকে ডিম নিঃসরণ না হওয়া।
  • জরায়ু কিংবা ডিম্বনালীর সমস্যা।
  • পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
একজন মহিলার বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে এই তিনটি। এই তিনটি কারণে একজন মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়ে থাকে। এই কারণে একজন মহিলা বারবার চেষ্টা করার পরও সন্তান জন্মে ব্যর্থ হয়।

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের কারণ

মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে শরীরে ভিটামিনের অভাব। তাই যদি আপনার এই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে জানার চেষ্টা করুন মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়। তারপর দেখুন শরীরে সেই ভিটামিনের অভাব রয়েছে কিনা। ভিটামিনের অভাব ছাড়াও মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে সেগুলো হল।
১। মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের একটি কারণ হচ্ছে ডিম্বস্ফোটন ব্যাধি। একজন মহিলার নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন হল গর্ভধারণের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর এই ডিম্বস্ফোটন এর বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। আর এইরকম সমস্যার কারণে একজন মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়।

২। একজন মহিলার বন্ধ্যাত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে (PCOS) অর্থাৎ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। এটি একটি হরমোন জনিত ব্যাধি। এটির লক্ষণ অনিয়মিত পিরিয়ড, সিস্ট যা উচ্চমাত্রার এন্ড্রোজেন ডিম্বস্ফোটন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে যা একটি মহিলার বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী।

৩। অকাল ডিম্বাশয় ব্যর্থতা এটিও একটি কারণ একজন মহিলার বন্ধ্যাত্বের। প্রতিটি মহিলার ডিম্বাশয় রয়েছে। আর সেই ডিম্বাশয় বাচ্চা বৃদ্ধি হতে থাকে। অকাল ডিম্বাশয় ব্যর্থতা এর কারণে অল্প সময়ে ডিম্বাশয় ডিম উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। যার ফলে একজন মহিলার গর্ভধারণ করা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

৪। হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও হতে পারে মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের কারণ। ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন ও লুটিনাইজিং হরমোন এই দুটি হরমোন একজন মহিলার ডিম্বস্ফোটন উৎপাদন করে থাকে। এই দুটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মহিলাদের গর্ভধারণের সমস্যা হতে পারে।

৫। জেনেটিক ডিসঅর্ডার বলতে জেনেটিক সমস্যা বোঝানো হয়েছে। আর এই জেনেটিক সমস্যা একজন মহিলার গর্ভধারণের ক্ষমতা কে সীমাবদ্ধ করে দেয়। যার ফলে একজন মহিলা সহজে গর্ভধারণ করতে পারে না।

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ

মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের যে সকল লক্ষণ প্রকাশ পায় তা চোখে দেখে বোঝা যায় না। একটি মহিলার বন্ধ্যাতের লক্ষণ তার শরীরের ভেতরে প্রকাশ পায়। যার শুধুমাত্র একজন মহিলা বুঝতে পারেন। মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের লক্ষণগুলো আলোচনা করলাম।
  • অনিয়মিত মাসিক চক্র দেখা দেয়।
  • বেদনাদায়ক কিংবা ভারি মাসিক দেখা দিয়ে থাকে।
  • মহিলার পেলভিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে বিশেষ করে সহবাস করার সময়।
  • হরমোনের ভারসাম্যর সমস্যার কারণে শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং ব্রণ হতে পারে।
  • বারবার সন্তান নেয়ার চেষ্টা করার পরও অসফল হওয়া।
  • মেয়েদের পিরিয়ডের সময় রক্তের রং উজ্জ্বল লাল রঙের হয়ে থাকে যদি আপনার মাসিকের রক্ত হালকা লাল রংয়ের হয় তাহলে এটি বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হতে পারে।

বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায়

একটি মহিলার বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন রকম কারণ থাকতে পারে। আর সেই সমস্যার কারণে একজন মহিলা অনেক চেষ্টা করার পরও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন রকম উপায় রয়েছে যার সাহায্যে একজন মহিলা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারে। আসুন বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় গুলো আলোচনা করলাম।
মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তি পেতে হলে খাদ্যাভাস ঠিক করতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালরি খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে গেলে গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দেয় তাই ক্যালরি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
  • সঠিক বয়সে বাচ্চা নিতে হবে।
  • শরীরের স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে হবে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করা যাবে না।
  • বাসায় রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বাইরের খাবার বেশি খাওয়া যাবে না।
  • অনেকে রয়েছে যারা রাত জেগে থাকে এবং দিনের বেলা ঘুমাই এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।

মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়

আপনি কি জানেন মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব কোন ভিটামিনের অভাবে হয়। যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমি আজকে আপনাদের জানাবো কোন ভিটামিনের অভাবে একজন মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়। বন্ধ্যাত্ব এমন একটি সমস্যা যার কারণে একজন মহিলা পরিবার এবং সমাজের কাছে বিভিন্ন রকম লাঞ্ছনা পেয়ে থাকে। 

প্রতিটি মেয়েদের স্বপ্ন থাকে সন্তান জন্ম দেওয়ার। আর যখন বন্ধ্যাত্ব এর কারণে সেই মহিলা বারবার চেষ্টা করার ফলেও বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না তখন হতাশ হয়ে পড়ে। অনেক রয়েছে যারা ডিপ্রেশনে চলে যাই। একজন মহিলার শরীরে যদি ভিটামিন ই এর অভাব থাকে তাহলে সেই মহিলা বন্ধ্যাত্ব এর সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনি যদি বন্ধ্যাতের সমস্যায় ভোগেন তাহলে প্রথমে আপনার পরীক্ষা করা উচিত আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি রয়েছে কিনা। 

যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ই এর ঘাটতি থাকে তাহলে আপনার প্রথমে উচিত হবে আপনার শরীরে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ই সরবরাহ করা। যদি ভিটামিন ই সঠিক মাত্রায় থাকার পরও আপনার গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং জানতে হবে বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় কি। সেই উপায় মেনে আপনি আপনার বন্ধ্যাত্ব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে কোন হরমোন প্রয়োজন

আমাদের সকলের জানা প্রয়োজন বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধে কোন হরমোন প্রয়োজন এবং বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় কি কি। বন্ধ্যাত্ব ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেয়েদের ডিম্বাণু আর ছেলেদের শুক্রাণু ওপর থাইরয়েড হরমোন অনেকটা প্রভাব ফেলে। থাইরয়েড হরমোন কমবেশি হলে বাচ্চা হওয়ার সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

তাই অবশ্যই আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোন এর ভারসাম্য ঠিক রাখতে হবে। তাছাড়াও প্রলাক্টিন হরমোন বন্ধ্যাত্বের সাথে জড়িত। এই হরমোন বেড়ে গেলে মেয়েদের ডিম ঠিকমতো ফোটে না। তাই এই হরমোন যদি শরীরে ভারসাম্য ভাবে না থাকে তাহলেও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পরামর্শমূলক কিছু কথা

আমাদের সমাজের চোখে বন্ধ্যাত্ব মানেই মহিলাদের সমস্যা মনে করা হয়। বাচ্চা না হলে প্রথমেই মহিলাদের দায়ী করা হয়। কিন্তু বাচ্চা না হওয়ার পেছনে একজন মহিলা যতটুকু দায়ী থাকে ঠিক ততটুকু একজন পুরুষও দায়ী থাকতে পারে। তাই কখনোই বাচ্চা না হলে সরাসরি মহিলার দিকে আঙ্গুল তোলা যাবে না। 

আমার লেখা বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কি কি কারনে বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে। আর সেগুলোর সমাধান কি। এরকম আরো প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে নিয়মিত আমার লেখা আর্টিকেল গুলো পড়ুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url