রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

 

আপনার শরীরের কি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে? কিন্তু আপনি জানেন না রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় কি। আসলেই যদি এমনটা হয় তাহলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। কারণ এই আর্টিকেলে আমি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি পুরো পড়ুন। আশা করছি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সকল ধরনের তথ্য এই আর্টিকেল এর ভেতর পাবেন। রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়ঃ ভূমিকা

আমাদের মনে হয় আমাদের শরীর খুব একটা ভালো থাকছে না। কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ছি। কিন্তু কেন তাও বুঝতে পারছি না। যদি আপনার সাথে ঠিক এমনটাই হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। কারণ অনেক সময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন রকমের অসুখ লেগেই থাকে। আর একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে সহজে তা ভালো হতে চাই না। এজন্য আমরা অনেক সময় চিন্তিত হয়ে পড়ি। 

কিন্তু এখানে চিন্তিত না হয়ে কিছু নিয়ম মেনে আর কিছু পুষ্টিকর খাবার খেয়ে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহজেই বৃদ্ধি করতে পারবেন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সমূহ জানতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি

আমরা অনেকেই জানিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলতে সাধারণত আমরা ইমিউনিটি কে বলে থাকি। আমাদের সকলের শরীরের একটি নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। বাইরে থেকে যখন কোন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু আমাদের শরীরে আক্রমণ করে তখন সেই ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর সাথে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন কারণে সেই ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

ফলে খুব সহজেই যেকোনো ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু আমাদের শরীরে আক্রমণ করতে পারে।তাতে করে আমরা খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতে হবে। একদিনেই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব নয়। আর সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় কেন

আমরা অনেক সময় অনেক রকম পুষ্টিকর খাবার খেয়ে থাকি। আর মনে মনে ভাবি যে আমি পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছি সেহেতু আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু না শুধুমাত্র পুষ্টিকর খাবার খেলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না। আপনাকে জানতে হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় কি। আপনার জীবনে এমন অনেক কিছু কাজ করে থাকেন যে কারণে আস্তে আস্তে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কিন্তু আপনি জানেন ও না যে কি কারণে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। চলুন আজকে আপনাদের জানিয়ে দিই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় কেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ঠিকমতো না ঘুমানো। কারণ আমাদের সকলের শরীরে একটি নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে। একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ৫ থেকে ছয় ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। কিন্তু কোন কারনে যদি আপনি অতিরিক্ত রাত জাগেন বা সঠিক নিয়মে না ঘুমান তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যাবে। তাই অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে ঘুমানো।

আমাদের সকলের জীবনে কমবেশি চিন্তা লেগেই থাকে। আমরা সব সময় ভাবি সে এইটা করল আমি করলাম না কেন, সেই এইটা পারলো আমি পারলাম না কেন, তার এইটা আছে আমার নেই কেন। এরকম ভেবে ভেবে নিজের ভেতরে মানসিক চাপ সৃষ্টি করি। আর সেই কারণেই আস্তে আস্তে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক চাপ কমাতে হবে।

সাধারণত আমাদের দেশের মহিলার তুলনায় পুরুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। পুরুষদের ধূমপানের অভ্যাস আস্তে আস্তে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। যা তারা সহজে বুঝতেও পারছে না। তাই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলে যে কোন নেশা দ্রব্য বা ধূমপান পরিহার করতে হবে।

আমরা আমাদের শরীরের প্রতি একটু বেশি অবহেলা করে থাকি। সারাদিন এই কাজ সেই কাজ কতই কাজই না করি। কিন্তু কোন রকম শারীরিক পরিশ্রম করতে চায় না। কিন্তু এই শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলেই আস্তে আস্তে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চান তাহলে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। এখনকার সময়ে আমরা সাধারণত ঘরের খাবারের চেয়ে বাইরের খাবার খেতে বেশি পছন্দ করি। শুধুমাত্র কারণ খুঁজে বেড়াই বাইরের খাবার খাওয়ার। আর এই বাইরের খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে অবশ্যই বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোন ভিটামিন

আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ভিটামিনের বিভিন্ন রকম কাজ রয়েছে যা দ্বারা আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। তাই আমাদের সব সময় উচিত খাদ্য তালিকায় ভিটামিন জাতীয় খাদ্য যোগ করার। সকল প্রকার ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু কিছু কিছু বিশেষ ভিটামিন রয়েছে যেগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কোন ভিটামিন তা আলোচনা করলাম।
ভিটামিন সিঃ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে একটি কার্যকরী ভিটামিন হচ্ছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। যেকোনো ধরনের দেশীয় টক জাতীয় খাবারে ভিটামিন সি রয়েছে। যেমন-লেবু, আমলকি, কমলা, মালটা ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে কেজি পেয়ারা, শিমের বিচি যাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এই সকল খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আপনার শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করতে পারেন।

ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন সি এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি তেও রয়েছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির গুন। আমাদের দেশে খুব কমই খাবার রয়েছে। যেগুলোনে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। যেগুলোনে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। কিন্তু ভিটামিন ডি এর সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে রোদ। আপনি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে ২ টার মধ্যে শুধুমাত্র আধাঘন্টা রোদ্রে দাঁড়িয়ে শরীরে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে পারবেন। যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

প্রোটিনঃ ভিটামিন এর পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের খাবারে প্রোটিন যোগ করতে হবে। কারণ প্রোটিনের রয়েছে এমন এক ধরনের ক্ষমতা যাতে করে সহজেই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। কিন্তু প্রোটিনের ক্ষেত্রে আপনাকে একটু খেয়াল রাখতে হবে যে প্রথম ধাপের প্রোটিন যুক্ত খাবার গুলো বেছে নিতে হবে। যেমন-মাছ,মাংস, ডিম, বাদাম ইত্যাদি প্রথম ধাপের প্রোটিন যুক্ত খাবার।

আপনি যদি ভেজিটেরিয়ান হন তাহলে ডাল দিয়েও আপনার প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ৫ থেকে ৬ রকমের ডাল একসাথে মিশিয়ে খেতে হবে। একসাথে পাঁচ থেকে ছয় রকমের ডাল ও আপনার জন্য প্রথম সারির প্রোটিনের কাজ করবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেসব খাবার

কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আমরা অনেকেই সে সকল খাবার সম্পর্কে জানি না। যেমন আমরা জানিনা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো কি কি। তাই আমাদের মনে অনেক রকম প্রশ্ন জাগে। আজকে আপনাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দেব। এখন আলোচনা করব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেসব খাবার।

ডিমঃ ডিম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি প্রধান খাবার। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি থেকে দুইটি সেদ্ধ ডিম অবশ্যই রাখুন। অনেকেই রয়েছে যারা ডিম খেতে পছন্দ করে না কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অবশ্যই খাদ্য তালিকায় আজকে থেকেই ডিম যোগ করুন।

কেজি পেয়ারাঃ আমাদের দেশে প্রায় সকল জায়গায় কেজি পেয়ারা দেখা যায়। কিন্তু আমরা এটা জানিনা যে কেজি পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে চাইলে কেজি পেয়ারা খেতে পারেন।

চিনা বাদামঃ চিনা বাদাম এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জিংক ও আইরন। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খুব বেশি সাহায্য করে থাকে। তাই অবশ্যই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এক মুঠ চিনা বাদাম ভিজিয়ে রেখে তা খেতে পারেন।

পালং শাকঃ পালং শাক এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আয়রন। পালং শাকে উপস্থিত আয়রন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোষ গুলোকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। সেহেতু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পালং শাক হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটাকেরোটিন। যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করার পর ভিটামিন এ এর কাজ করে থাকে। সেহেতু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেই মিষ্টি আলু খেতে পারেন।

গ্রিন টিঃ গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট। এতে ক্যালরির পরিমাণ অনেকটা কম আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ অনেক বেশি। গ্রিন টি পান করেও আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন।

লেবুঃ লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। তাই প্রতিদিন ভাতের সাথে এক থেকে দুই টুকরা লেবু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দেখবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গেছে।

মাছ ও মাংসঃ মাছ ও মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। আর প্রোটিন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশি বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ সাধারণ অভ্যাস চর্চা

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সাধারণত কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভালো কিছু অভ্যাস এর মাধ্যমে খুব সহজেই আমাদের শরীরের যেকোনো রোগ প্রতিরোধ হতে বাধ্য। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে হলে নিম্নের অভ্যাসগুলোর আপনার আয়ত্তে আনার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গেছে। তাই নিয়মিত রোগ প্রতিরোধ সাধারণ অভ্যাস চর্চা গুলো করুন।

ব্যায়ামঃ আমাদের উচিত নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। কারণ আমরা যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করি তাহলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম রোগ দেখা দিতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সঠিক ঘুমঃ আমরা অনেকেই আছি বিনা কারণে রাত জেগে থাকি আবার অনেকেই আছি অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি সহজে ঘুম থেকে উঠতে চাই না। আমাদের শরীরের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমের চাহিদা রয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য সাধারণত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। এর থেকে কম হলে বা অতিরিক্ত হলেও আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই অবশ্যই সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
খাদ্যাভাসঃ খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন যুক্ত খাবার রাখুন। তার সাথে সাথে খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এতে করে আপনার শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকাঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রেই আপনার শরীরের রোগ কম করতে সাহায্য করে। আপনি যদি অপরিষ্কার থাকেন তাহলে আপনার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অবশ্যই নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাত নিয়মিত ধোঁয়া, হাতের নখ অতিরিক্ত বড় না করা এগুলোর দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ হাতের মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ

আপনার মনের অবশ্যই প্রশ্ন জাগতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধির ঔষধ কি পাওয়া যায়? আমাদের দেশে সাধারনত এমন কোন ঔষধ নেই যা সেবন করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কোন ঔষধ নয়। কিছু কিছু অভ্যাস আর কিছু কিছু খাদ্য দ্বারা খুব সহজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। তাই আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে অবশ্যই আপনার জীবন ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনুন এবং আপনার খাদ্য তালিকায় ভিটামিন,প্রোটিন, আয়রন জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেছে।

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়

আপনার শিশু কি কিছুদিন পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ে। সর্দি জ্বর এগুলো কি কিছুতেই আপনার শিশুর পেছন ছাড়ছে না। তাহলে বুঝবেন আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন।শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। কিছু কিছু নিয়ম শিশুদের জীবনযাত্রায় যোগ করে আমরা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি। 

শিশুরা সাধারণত বলতে পারে না তাদের কি সমস্যা হচ্ছে বা কোথায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তা বুঝতে হবে। আপনাদের উচিত তাদের খাদ্যের তালিকায় পুষ্টিকর খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া। তাহলে এখন জেনে নিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো কি কি।

কিছু কিছু বাচ্চা আছে যারা মোবাইলের প্রতি আসক্ত। তারা সহজে ঘুমাতে চায় না। তাদের এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম একটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই অবশ্যই আপনার শিশু যেন পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম যাই সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটি ছোট বাচ্চার সাধারণত প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম দরকার। তাই আপনার বাচ্চার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

আমাদের বড়দের পাশাপাশি ছোটদেরও উচিত নিয়মিত ব্যায়াম করা। তাই ছোটবেলা থেকেই আপনার শিশুকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে বলুন। এতে করে আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কিছুক্ষণ সময় আপনার শিশুর সাথে খেলাধুলা করুন। একটু হাটাহাটি দৌড়াদৌড়ি বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার শিশুর ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ একটি শিশুর মস্তিষ্ক এতটা তুখোর যে আপনি ছোটবেলা থেকে যে অভ্যাস গড়ে তুলবেন সেই সেভাবেই গড়ে উঠবে। তাই একটি বাচ্চার ক্ষেত্রে অবশ্যই ছোটবেলা থেকেই ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে হবে।

কিছু কিছু খাদ্য রয়েছে যেগুলো শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।সে সকল খাদ্য আপনার শিশুর খাদ্য তালিকায় যোগ করুন। সে সকল খাদ্য দাঁড়াও আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সে সকল খাদ্য গুলো হচ্ছেঃ
  • বাদাম
  • দই
  • ডিম
  • পালং শাক
  • বাটার
  • স্যালমন মাছ
  • মিষ্টি আলু
  • ফলমূল
  • হলুদ
  • গরুর কলিজা
  • কড়াইশুঁটি
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যায়াম

আমরা সাধারণত আমাদের শরীরের ওজন কমাতে বা শরীরকে ফিট রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম করে থাকি। আমরা শরীরকে ফিট রাখার জন্য কত রকম ঐ ব্যায়াম করে থাকি। কিন্তু আমরা কি জানি যে শুধু মাত্র শরীর ফিট রাখার জন্যই ব্যায়াম কার্যকরী নয়। নিয়মিত ব্যায়াম করার আরো একটি ভালো দিক হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি। আমরা নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে আজ থেকে আপনিও নিয়মিত ব্যায়াম করুন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যায়াম গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
আপনি প্রতিদিন নিয়মিত তিরিশ মিনিট করে হাঁটতে পারেন। যা আপনার শরীরের জন্য একটি খুবই ভালো ব্যায়াম। হাজারো ব্যস্ততার মাঝে আপনি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে হলে কোন যানবাহন ব্যবহার না করে একটু হেঁটে গেলেও আপনার শরীরের জন্য সেটি উপকার। একতলা থেকে আরেক তলায় যেতে আপনি লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে যেতে পারেন যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

সারাদিন ব্যস্ততার মাঝেও শুধুমাত্র তিরিশ মিনিট সাইকেলিং আপনার শারীরিক ব্যায়ামের ভেতর অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তাই অবশ্যই প্রতিদিন কম করে হলেও শুধুমাত্র ৩০ মিনিট সাইকেলিং করার একটি অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতে করে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

আপনি গ্রামে বাস করেন কিংবা আপনার বাসায় সুইমিং পুল আছে। কিন্তু আলাদাভাবে টাইম বের করে জিমে গিয়ে বা এক্সট্রা টাইম বের করে ব্যায়াম করার সময় নেই। তো আপনি প্রতিদিন সাঁতার কেটে আপনার শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন। সাঁতার কাটার মাধ্যমে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

আপনি যেই ব্যায়াম করুন না কেন। আপনার সাথে সাথে আপনার বাসার ছোট বাচ্চাদের শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে তাদের ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়ঃ শেষ কথা

আপনারও যদি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাহলে চিন্তিত না হয়ে উপরের উল্লেখিত পদ্ধতি বলুন অবলম্বন করুন এবং মেনে চলুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনাদের মাঝে কিছু দরকারি তথ্য পৌঁছানো ছিল আমার মূল উদ্দেশ্য। আশা করছি আমার আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা কিছু হলেও আপনাদের দরকারি তথ্য পেয়েছেন। এরকম আরো তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের লেখা আর্টিকেলগুলো পড়ুন। আমরা আপনাদের সামনে এরকম দরকারি তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্যা বর্ষা ওয়েব সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url